বিশ্বব্যাংক বলছে, জ্বালানির দাম গড়ে ২০ শতাংশ বাড়বে

>
  • বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
  • চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে।
  • পণ্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণ বিশ্ব অর্থনীতির চাঙা ভাব।

চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম গড়ে ২০ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে বছর শেষে গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৫ মার্কিন ডলারে উঠতে পারে। তেলের সঙ্গে বাড়বে গ্যাসের দামও। তবে কমতে পারে কয়লার দর।

বিশ্বব্যাংকের এ পূর্বাভাসটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ছয় মাস পরপর পণ্যবাজার নিয়ে এ ধরনের পূর্বাভাস প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে জ্বালানির দামে, যা কয়েক মাস ধরে বাড়ছে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে তাদের পূর্বাভাসে থাকা প্রায় ৪০টি পণ্যের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের দাম বেড়েছে। তবে ২০১১ সালের তুলনায় পাঁচ ভাগের মধ্যে চার ভাগ পণ্যের দাম এখন কম। ওই বছর বিশ্বে পণ্যমূল্য সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি ছিল।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, পণ্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণ বিশ্ব অর্থনীতির চাঙাভাব। ২০১৭ সালে বৈশ্বিক উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কিছু কিছু পণ্যের উৎপাদনও স্থবির হয়ে আছে। এ ছাড়া চীন পরিবেশদূষণকারী ধাতু ও জ্বালানির উৎপাদন কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শস্যের আবাদ কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এসব কারণেও পণ্যবাজার উঠতি।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে এ বছর জ্বালানি তেলের গড় দর ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে তেলের ব্যারেলপ্রতি গড় দর ছিল ৫৩ ডলার। জ্বালানি তেলের দর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে একেবারেই কম ছিল।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) সদস্যদেশগুলোতে উৎপাদন সীমিত করাকে দায়ী করেছে। সংস্থাটি বলছে, ওপেক দেশগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়ানো। এ ছাড়া ইরানের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের শঙ্কা, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে অস্থিরতা মার্চে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। চলতি এপ্রিলে তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দাম বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে তেল কোম্পানি শেলও উৎপাদন বাড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি বছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) গড় দাম (জাপানে সরবরাহের ক্ষেত্রে) প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ৮ দশমিক ৮০ ডলারে উন্নীত হতে পারে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৮ ডলার ৪ সেন্ট। তবে কয়লার দর কমবে। চলতি বছর শেষে প্রতি টন কয়লার গড় মূল্য কমে ৮৫ ডলারে নামবে, যা আগে ৮৮ ডলারের বেশি ছিল।

বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানি করে। গ্যাসও আমদানি শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বিশ্বব্যাপী জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা অন্যান্য পণ্য আমদানির খরচ বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, গম, চাল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।

অবশ্য বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়বে না, বরং কমতে পারে। বিশেষ করে চিনির দর কমে চলতি বছর টনপ্রতি গড়ে ৩০০ ডলারে নামতে পারে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩৫০ ডলার। মার্চে চিনির দর আগের মাসের চেয়ে ১০ ডলার কমে টনপ্রতি ২৯০ ডলারে নেমেছে।

একইভাবে কমেছে সয়াবিন তেলের দর, যা জানুয়ারিতে টনপ্রতি ৮৬৪ ডলার ছিল, মার্চে তা বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ৮৩৪ ডলারে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে চলতি বছর শেষে সয়াবিন তেলের গড় দাম টনপ্রতি ৮৫৭ ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য পাম তেলের টনপ্রতি দর ১৮ ডলার বেড়ে ৬৮১ ডলারে উঠেছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি ও আগামী বছর বিশ্ববাজারে গমের দামে বিশেষ কোনো হেরফের হবে না। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে হার্ড রেড উইন্টার (এইচআরডব্লিউ) গমের দর টনপ্রতি ১৮১ ডলার ছিল। বছর শেষে গড়ে তা ১৯০ ডলার হতে পারে।

এ বছর বিভিন্ন ধাতুর দাম ৯ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সোনার দর প্রতি আউন্সে ৪২ ডলার বেড়ে ১ হাজার ৩০০ ডলারে উন্নীত হতে পারে, যা আগামী বছর কিছুটা কমবে।