গ্যাস সরবরাহের অপেক্ষায় সাগরে এলএনজি টার্মিনাল

গ্যাস সরবরাহের অপেক্ষায় এলএনজিবাহী বিশেষায়িত জাহাজ এক্সিলেন্স। গত রোববার মহেশখালীর উপকূল থেকে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
গ্যাস সরবরাহের অপেক্ষায় এলএনজিবাহী বিশেষায়িত জাহাজ এক্সিলেন্স। গত রোববার মহেশখালীর উপকূল থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বন্দর জেটি থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী অংশে নোঙর করে রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’। প্রায় ২৭৭ মিটার লম্বা এই জাহাজের (এটি ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে) চারটি চেম্বারে আছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ঘনমিটার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। ২৪ এপ্রিল কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে এসেছে জাহাজটি। সাগরের যে অংশে জাহাজটি নোঙর করেছে, তার সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে (মহেশখালী উপকূল থেকে) সাগরেই এলএনজি সরবরাহের বেস স্টেশন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চলতি মাসের মাঝামাঝি জাহাজটি ভিড়বে ওই বেস স্টেশনে। এরপর শুরু হবে গ্যাস সরবরাহের কাজ।

গ্যাস সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা এই জাহাজ গত রোববার পরিদর্শন করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২৯ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিদল। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘আবু বকর’-এ চড়ে সেদিন সকালে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি থেকে সাগরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ পেরিয়ে তারা জাহাজটি পরিদর্শন করে। লালচে রঙের জাহাজটির পানির নিচের অংশ সাড়ে ১২ মিটার। এই জাহাজ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সংগ্রহ করে পরে তা পাইপের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হবে।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পর বেসরকারি শিল্পকারখানার উৎপাদনে গতি আসবে।

প্রতিনিধিদলে থাকা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া। গ্যাসের চাপ কম থাকায় অনেকগুলো শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আছে বা পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে না। এই পরিস্থিতিতেই এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে তাতে বিনিয়োগ বাড়বে। বেসরকারি খাতে চাঙা ভাব ফিরে আসবে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ জন্য ভাসমান টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। জাহাজটি থেকে প্রতিদিন ৪৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, তাপমাত্রা কমিয়ে গ্যাসকে ৬০০ গুণ ছোট করে এই জাহাজে আনা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসকে প্রযুক্তির মাধ্যমে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়।

স্পর্শকাতর এই স্থাপনার নিরাপত্তার বিষয়ে চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের ফ্লিট কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের পর যেকোনো জাহাজের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে নৌবাহিনী। দুটি জাহাজ ও দুটি দ্রুতগামী জলযান ভাসমান টার্মিনালটির নিরাপত্তা দিচ্ছে। সাগরে নৌবাহিনীর পাশাপাশি উপকূলে কোস্টগার্ড এবং স্থলভাগ থেকে পুলিশও নিরাপত্তা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।