ভোলার মুগ ডাল যাচ্ছে জাপানে

ভোলায় এ বছর মুগ ডালের ব্যাপক ফলন হয়েছে। খেত থেকে পূর্ণোদ্যমে ডাল তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জে।  ছবি: প্রথম আলো
ভোলায় এ বছর মুগ ডালের ব্যাপক ফলন হয়েছে। খেত থেকে পূর্ণোদ্যমে ডাল তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জে। ছবি: প্রথম আলো

কৃষকেরা উন্নত বীজ ও প্রশিক্ষণ পাওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভোলায় চলতি বছরে মুগ ডালের ব্যাপক ফলন হয়েছে। জেলার কৃষকদের উৎপাদিত এই ডাল রপ্তানি হবে জাপানে। ফলে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা।

সম্প্রতি ভোলা সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ও ভেলুমিয়া চরকালরি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আবাদ করা হয়েছে মুগ ডালের। কৃষকেরা এখন স্ত্রী-কন্যা-পুত্র নিয়ে দল বেঁধে খেত থেকে ডাল তোলা, শুকানো ও বিক্রির কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কৃষকেরা জানান, গাছে যেমন ডালের ছড়া বেশি ধরেছে, তেমনি ছড়াগুলোতেও আবার দানার সংখ্যা বেশি।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবারে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা—এই সাত উপজেলাতেই ব্যাপক হারে মুগডালের আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো, একরপ্রতি ১৪-১৫ মন ফলন হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভোলার উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে জানান, ভোলায় এ বছর ২৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে মুগ ডালের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছে দেড় মেট্রিক টন, যেটাকে বাম্পার ফলন বলা যায়। আবাদ করা মুগের মধ্যে বেশি হচ্ছে উন্নত জাতের বারি মুগ-৬। এ ছাড়া অন্যান্য জাতের মুগের আবাদও করেছেন অনেক কৃষক। তবে বারি-৬ জাতের মুগে ফলন বেশি হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃষকেরা বেশ উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা বিনা মূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও প্রশিক্ষণ এবং কম সুদে ঋণ পেয়েছেন। এ ছাড়া ডাল বিক্রির ক্ষেত্রেও সহায়তা দেওয়ায় কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এ ধরনের সহযোগিতা চলতে থাকলে মুগ ডাল উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান ভোলার কৃষকেরা। এতে তাঁরা ন্যায্যমূল্যে ডাল বিক্রির সুযোগ পাওয়ার আশা করেন।

আলাপকালে জানা যায়, ইতিমধ্যে ভোলা সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন ৬৬ শতাংশ জমিতে আবাদ করে ৯ মণ, আমির হোসেন ৮০ শতাংশে ১০ মণ; পশ্চিম ইলিশা গ্রামের দুলাল মোল্লা ৮০ শতাংশে ১১ মণ; বোরহানউদ্দিন উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের অহিদ সরদার ১৩০ শতাংশে ১৫ মণ; দক্ষিণ বাটামারা গ্রামের রমিজ মিয়া ৫৫ শতাংশে ৭ মণ  মুগ ডাল পেয়েছেন। বৃষ্টি না হলে তাঁরা আরও দু-তিন দফায় ডাল তুলতে পারবেন।

স্থানীয় কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে স্থানীয় পাইকারেরা প্রতি কেজি মুগ ডালের দাম ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা দিতে চান না। কিন্তু জাপানে রপ্তানির জন্য প্রতি কেজি ডাল ৬০-৬২ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। ফলে প্রতি মণ মুগ ডালের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। রপ্তানির জন্য ডালের চাহিদাও প্রচুর।

ভোলার বেসরকারি গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) অর্থায়নে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জিজেইউসের সহায়তায় ভোলায় মুগ ডালের জাত উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণের কাজ চলছে। এবারে ভোলার পাঁচ উপজেলার আট হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বারি মুগ-৬ জাতের বীজ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত মুগ ডাল জাপানের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে। জাপানি সংস্থাটি ইতিমধ্যে ভোলা থেকে ৩০ মেট্রিক টন মুগ ডাল ক্রয় করেছে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, বেসরকারি সংস্থার আওতায় অনুদানপ্রাপ্ত কৃষকেরা অণুজীব সার পদ্ধতি ব্যবহার করে মুগ ডালের আবাদ করছেন। জাপানি সংস্থাটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মুগ ডাল ক্রয় করছে।