চারের এক ভাগই ধারের টাকায়

প্রতিবারের মতো এবারও মোট বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ টাকাই অর্থমন্ত্রীকে ধার করতে হবে। আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এর মধ্যে ধার করতে হবে তাঁকে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার মতো। এই ধারের টাকার নামই হচ্ছে বাজেট ঘাটতি।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মতো ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে ১০ বছর ধরেই বাজেট দিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। জিডিপি দিয়ে অর্থনীতির আকার মাপা হয়। একটি দেশের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তার বাজারমূল্যই হচ্ছে জিডিপি। আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটেও ঘাটতি বরাবরের মতো ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকছে।

চলতি অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পাবেন বলে ধরে নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, অনুদান পাওয়ার আশা কোনো সময়ই পুরোপুরি পূরণ হয় না। ফলে অনুদানের ওই অর্থ পাওয়া না গেলে শেষ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায়।

আগামী অর্থবছরের এত বড় ঘাটতি তাহলে কীভাবে মেটাবেন অর্থমন্ত্রী? বরাবরই ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী মোটাদাগে দুটি উৎস বেছে নেন। একটি বিদেশি উৎস ও অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎসের রয়েছে আবার দুটি ভাগ—সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ব্যবস্থা। আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণের জন্য বড় উৎস হিসেবে ভাবা হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থাকে। আর কমিয়ে আনা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী বিদেশ থেকে অনুদান ও ঋণ মিলিয়ে মোট ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। আগামী অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে অনুদান গ্রহণের লক্ষ্য বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থ সংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা আগামী বাজেটে কমানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ ও দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি—এ দুটি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইপলাইনে অনেক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আমরা স্বল্প সুদের বিদেশি ঋণ ওইভাবে আনতে পারি না শুধু দক্ষতার অভাব ও শর্ত মানার বাধ্যবাধকতার কারণে।’

এমন কী শর্ত থাকে যে ঋণও আনা যায় না, এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম রায়হান বলেন, ‘বড় শর্ত হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম অবশ্য এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ  বেশি পাওয়া গেছে। ১০ মাসেই পাওয়া গেছে ৪২০ কোটি ডলার (৩৪ হাজার কোটি টাকা)। আগামী অর্থবছরে ৭০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

>

ঘাটতি

১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ধার

৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা

সঞ্চয়পত্র বিক্রি

২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার

বিদেশ থেকে অনুদান

১০ হাজার কোটি টাকা

বিদেশ থেকে ঋণ

৪২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা