বড় বাজেট দিলেও বাস্তবায়িত হয় না

৭ জুন বাজেট দেবেন অর্থমন্ত্রী। এর ছয় মাস পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। ফলে অর্থমন্ত্রীর নজরে থাকবে প্রথম ছয় মাস।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

এত বড় বাজেট দিলেও কখনোই বাস্তবায়ন করা যায় না। আগামী অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এটি অতিরঞ্জিত বাজেট। মূল বিষয় হলো, বাজেট বাস্তবায়নের হার ক্রমশই কমে আসছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, এর সংশোধিত বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করা গেছে। এরপর প্রতিবছর বাস্তবায়নের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। চলতি অর্থবছরে কমতে কমতে বাজেট বাস্তবায়ন দাঁড়াবে ৮০ শতাংশের মতো। আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, তা বাস্তবতা ও ব্যয়ের সক্ষমতার নিরিখে অতিরঞ্জিত বাজেট।

প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও একই চিত্র দেখা যায়। কোনো বছরই পুরো এডিপি বাস্তবায়িত হয়নি। সেখানেও প্রতিবছর এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে যাচ্ছে। চিরন্তন যেটা দেখা যায়, সংশোধিত এডিপি মূল এডিপি থেকে কমে যায়। মূল এডিপির অনুপাতে ৭০-৮০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয় না। প্রতিবছরই দেখা যায়, প্রথম ৯ মাসে ৪০-৪৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়। শেষের দিকের দুই মাসে বাকি ৩০-৩৫ শতাংশ টাকা খরচ হয়। এতে কাজের গুণগত মান থাকে না। বড় আকারের এডিপি হওয়ার কারণে অগ্রাধিকার বিবেচনা না করেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে সব প্রকল্পেই বিক্ষিপ্তভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর ফলে সব প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বাড়ে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে খরচের মাত্রা বাড়ে। এসব কারণে আমাদের দেশে কোনো প্রকল্পই শুরুতে যে মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল, সেই সময়ে শেষ করা যায়নি। এতে চার, পাঁচ, ছয় বছর সময় বেশি লাগে। সে কারণে প্রকল্পের খরচ তিন-চার গুণ বেড়ে যায়।

রাজস্ব খাতের পরিস্থিতিও খুব ভালো নয়। মোট রাজস্বের ৮০ শতাংশের মতো আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ১৮-১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। চলতি অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমে ১৪-১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ বছরও রাজস্ব আদায়ে বড় মাত্রায় ঘাটতি হবে। তবে এটি উদ্বেগের বিষয় নয়। কেননা কাঙ্ক্ষিত হারে খরচও (এডিপি বাস্তবায়ন) করতে পারছি না। এতে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।

আমার মনে হয়, নির্বাচনের বছর হওয়ায় শুল্ক-করে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না, বরং কর ছাড়ই বেশি দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, করপোরেট করহার কমানো হবে। এখন দেখতে হবে, কত কমানো হয়। সাধারণত দেখা যায়, কর কমানো হলে করদাতা ও করদাতা প্রতিষ্ঠান কর দিতে আগ্রহী হন। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। সে ক্ষেত্রে করপোরেট কর কমালেও রাজস্ব খাতে আরেকটি অভিঘাত আসতে পারে।