'আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি, যদি আসে কোনো দিন...'

>
  • সর্বজনীন পেনশন
  • এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে।
  • অর্থ বিভাগের একটি দল এ ব্যাপারে ভারতও সফর করে এসেছে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে আবারও আশার কথা শোনালেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারসহ মোট চারবার এ আশার কথা শোনালেন তিনি। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে মান্না দের সেই গানের কলি মনে পড়ে যায়, ‘আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি, যদি আসে কোনো দিন সেই সুখপাখি’।
বাজেট বক্তব্যে গতকাল অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘টেকসই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর কাজ এ বছরেই শুরু করার আশা রাখি। অন্ততপক্ষে কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে চালু করার ইচ্ছে আছে।’
অর্থমন্ত্রী প্রথম পেনশন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দেশে একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এরপর প্রতিবারই দেশের বেসরকারি পেশাজীবীদের পেনশনের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলে আসছেন তিনি। বেসরকারি পেশাজীবীদের পাশাপাশি এবার তিনি বয়স্কদেরও গুরুত্ব দিয়েছেন।
সরকারের কাছে বর্তমানে যে পেনশনভোগীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, অর্থমন্ত্রীর গতকাল বাজেট বক্তব্যেই তা উঠে আসে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে পেনশনভোগীর সংখ্যা অতি সামান্য। সরকারি কর্মচারী ও কিছু বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী মিলে ৭ থেকে ৮ লাখ পরিবার বর্তমানে নিয়মিত পেনশন পায়। অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারী বাদে হতদরিদ্র ৩৫ লাখ লোক মাসিক ৪০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন, যা দেশের মোট বয়স্ক লোকের ৪ ভাগের ১ ভাগ। ভাতার এই পরিমাণ তাঁদের মানসম্মত জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে অর্থমন্ত্রীর যুক্তি হচ্ছে, ‘একসময় উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বয়স্ক লোকদের অনুপাত বাড়বে। তখন স্বাভাবিক বাজেট বরাদ্দের আওতায় তাঁদের সহায়তা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। অথচ আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে চাই, কমাতে চাই বৈষম্য। তাই বিদ্যমান সরকারি পেনশন কার্যক্রমের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চাই।’
প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এ ব্যাপারে সরকার কর্মসূচি পরিচালনা করবে, যাতে যেকোনো কর্মজীবী নিবন্ধন করতে পারবেন এবং মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে কর্মজীবীদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও কর্মজীবীদের পেনশন হিসাবে তাঁদের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে পারবেন। তবে হতদরিদ্র শ্রমজীবীদের জন্য তাঁদের অংশের বাড়তি হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকেও একটি অঙ্ক দেওয়া হবে।
এই টাকা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করে যে আয় হবে, তা জমা হবে সর্বজনীন পেনশন তহবিলে। এরপর জমাকৃত টাকা এবং ওই তহবিল থেকে আসা আয় যোগ করে মাসিক ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পেনশন দেওয়া হবে। এসব জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কাজটি করতে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার দরকার, যা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে। অর্থ বিভাগের একটি দল এ ব্যাপারে ভারতও
সফর করে এসেছে। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার কিছু অসুবিধার চিত্র তুলে ধরে ধারণাপত্রে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এই ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি।
বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের ব্যাপারে ধারণাপত্রে বলা হয়, এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারি, ব্যবস্থাপনা ও আইন নেই। প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে সঞ্চয় ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হলে গণকর্মচারী (অবসর) আইন, ১৯৭৪ এবং এ বিষয়ে যে বিধি আছে, তা সংশোধন করতে হবে এবং একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে বলেও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বর্তমান পেনশনধারীদের ভোগান্তি স্থায়ীভাবে দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও ভবিষ্য তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা পেনশন কার্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতায় কাজ করবে।