দৈনিক আদায় করতে হবে ১৫৩২ কোটি টাকা

>
  • চলতি জুন মাসে এনবিআরের কাঁধে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব।
  • কিন্তু কখনোই এক মাসে এত টাকা আদায় হয়নি।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪৫ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। তা করতে পারলে আলোচ্য অর্থবছরে এনবিআরের ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।

তবে এই লক্ষ্য অর্জনে জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। সেটি না হলে সংশোধিত বাজেটে অর্থের সরবরাহে টান পড়বে। এনবিআর অবশ্য কখনোই এক মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করতে পারেনি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। এই সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১১ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই এনবিআরকে বছরের শুরু থেকেই বিশাল লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে হয়েছে। যেন এনবিআর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটসম্যান। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, ব্যাট-বলের জমজমাট টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটসম্যানকে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে হয়। প্রথম দিকে রান তোলার গতি কিছুটা শ্লথ থাকে। ফলে যতই খেলা গড়াতে থাকে, ততই আস্কিং বা প্রয়োজনীয় রানরেট বাড়তে থাকে। শেষ দিকে চার-ছয় মেরে খেলাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে এনবিআরের অবস্থাও তেমনই হয়। এ বছরও রাজস্ব লক্ষ্য থেকে ক্রমেই পিছিয়েছে এনবিআর। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন মাসে নয়, দিনের হিসাবেই দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে সংস্থাটিকে।

চলতি অর্থবছরে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ৭১ হাজার কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ বেশি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর এনবিআরের লক্ষ্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী আইন যুগোপযোগী করা হয়নি। এখন রাজস্ব আদায়ে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা মূলত অর্থনীতির আকার এবং উৎসে কর বৃদ্ধির কারণে। এতে এনবিআরের খুব বেশি সৃজনশীলতা নেই।

আবদুল মজিদের মতে, যদি রাজস্ব খাতে সংস্কার হতো, তাহলে রাজস্ব আদায় আরও বাড়ত। অর্থনীতির সেই সক্ষমতা আছে। কিন্তু ২০১৩ সালে ভ্যাট আইন পাস হলেও এখনো তা চালু করা যায়নি। বহুদিন ধরেই প্রত্যক্ষ কর আইনের খসড়া করা হচ্ছে। শুল্ক আইনও সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে না। এ যুগোপযোগী আইনগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।

রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি
আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় করে থাকে এনবিআর। গত জুলাই-মে ১১ মাসে আয়কর খাতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এই সময়ে আয়কর আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে ১১ মাসে ৮১ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের কথা ছিল। এই সময়ে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার। লক্ষ্যমাত্রার পথে ঘাটতি ১০ হাজার ২১১ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে গত ১১ মাসে শুল্ক আদায় অপেক্ষাকৃত সন্তোষজনক। এই সময়ে ৬২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি ৬ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।