নিলামে গরম চায়ের বাজার

>
  • গত বছর দেশের বাগানগুলোতে চা উৎপাদন হয় ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি, যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন
  • এর আগে দেশে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ২০১৬ সালে, সে বছর সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়

 এবার মৌসুমের শুরুতে নিলাম বাজারে চায়ের চাহিদা বেড়েছে। বাড়তি চাহিদার কারণে আটটি নিলামে চায়ের দামও ছিল গত মৌসুমের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৮-১৯ মৌসুমে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আটটি নিলামে চায়ের সরবরাহ ও দাম পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের গড় দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মৌসুমের প্রথম নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে ২১৬ টাকা ৫২ পয়সায় বিক্রি হয়। আর সবশেষ ১২ জুনের নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় ২৩৮ টাকায়। গত মৌসুমের প্রথম নিলামে গড় দাম ছিল ২০৪ টাকা। এর পরের চারটি নিলামে দাম ওঠানামা করে। এদিকে এবার নিলামে যত চা বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে তার সিংহভাগই বিক্রি হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শান্তনু বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, নিলামে চায়ের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম ছিল। এ কারণেই মূলত চায়ের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের প্রগ্রেসিভ টাওয়ারে চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের ১৬৪টি চা-বাগানে উৎপাদিত চা এই নিলাম বাজারে বিক্রি হয়। এর বাইরে গত ১৪ মে এবার প্রথম শ্রীমঙ্গলে চায়ের পরীক্ষামূলক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল সোমবার এবং আগামী জুলাই মাসে শ্রীমঙ্গলে আরও দুটি নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শ্রীমঙ্গলে নিলাম হওয়ার কারণে এ সপ্তাহে চট্টগ্রামে নিলাম হবে না। আগামী সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে আবার চট্টগ্রামে নিলাম শুরু হবে।

চা বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চা আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু (যে নির্ধারিত মূল্যে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন করা হয়) ছিল ১ ডলার ৬০ সেন্ট। চা আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এই ট্যারিফ ভ্যালু বাড়িয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে করা হয় আড়াই ডলার। গত অর্থবছরে চায়ের ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ানোর পরই চা আমদানি কমতে থাকে। এতে নিলাম বাজারে চায়ের দাম বাড়তে থাকে। মৌসুমের শুরুতে চায়ের মান ভালো থাকায় নিলামে দামও বেশি পাচ্ছেন বাগানের মালিকেরা।

চা-বাগানের মালিকেরা জানান, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চা বাগান থেকে পাতা তোলা হয়। চা-পাতা তোলার ভরা মৌসুম হচ্ছে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এই চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করে বস্তায় বোঝাই করা হয়। এরপর ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে নিলাম বাজার থেকে এই চা কিনে মোড়কজাত বা খোলা আকারে বিক্রি করে কোম্পানিগুলো।

গত বছর দেশের বাগানগুলোতে চা উৎপাদন হয় ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি। চা চাষের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। এর আগে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে বছর সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়। এবার মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে চায়ের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন বাগানমালিকেরা।