আগামী সপ্তাহে মজুরি প্রস্তাব দেবে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মালিক ও শ্রমিক কোনো পক্ষই মজুরি প্রস্তাব দেয়নি। উভয় পক্ষই ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রস্তাব জমা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

রাজধানীর তোপখানা রোডে রোববার বিকেলে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। সভায় মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দিন আহমদ, শ্রমিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি ফজলুল হক, পোশাকশিল্পের মালিক প্রতিনিধি তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, পোশাকশিল্পের শ্রমিক প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামছুন্নাহার ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। তবে বোর্ডের নিরপেক্ষ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মজুরি নির্ধারণে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে গত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মজুরি প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা ছিল। উভয় পক্ষই জানিয়েছে, তাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারা আমাদের কাছে কিছু সময় চেয়েছে। সে জন্য আমরা সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভা ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যেই মালিক ও শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দেবে।’
মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাক খাত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফ ইন। যাতে কোনো রকম আঘাত না আসে এবং শ্রমিকেরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারেন এবং পোশাক খাত যাতে ভালো থাকে, সে জন্য মালিকের সক্ষমতা ও শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আমরা একটি হিসাব দাঁড় করতে চাই। সেটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সে জন্য আমরা ১০ দিন সময় চেয়েছিলাম। তবে আট দিন পেয়েছি।’ আগামী সভার আগেই মজুরি প্রস্তাব জমা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা হচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আগস্ট মাসে মজুরি বোর্ডের ছয় মাস শেষ হবে। তারপর আরও তিন মাস নেওয়ার সুযোগ আছে। আশা করছি, এর মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর সময় নিতে হবে না।
শ্রমিক প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামছুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের মজুরি প্রস্তাব মোটামুটি তৈরি। তবে গ্রেডের সংখ্যা সাতটি থেকে কমিয়ে পাঁচটি করায় মজুরি হার নির্ধারণে একটু ঝামেলা হয়েছে। মালিকপক্ষ যেহেতু দেয়নি, তাই আমরাও কিছুটা সময় পেলাম। কারণ এক পক্ষের প্রস্তাবে তো আলোচনা হবে না।’
অপর প্রশ্নের জবাবে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষ মজুরি প্রস্তাব দেওয়ার পর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবে মজুরি বোর্ডের সদস্যরা। এরপরই আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে সরকার ও মালিকপক্ষের ‘টালবাহানা’ বন্ধের দাবিতে মজুরি বোর্ডের সামনে প্রতীকী অনশন করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
এ ছাড়া নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা-কর্মীরা পোশাক খাতে নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা এবং গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা নিম্নতম মজুরি ১৮ হাজার নির্ধারণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ মজুরি বোর্ডের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে সেটি স্থগিত করা হয়।
পোশাকশিল্পের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়। তখন পোশাকশ্রমিকদের জন্য ৬২৭ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে বোর্ড। পরে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা এবং ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরির মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্যভাতা ১ হাজার ১০০ টাকা। একেকটি মজুরি কাঠামো পাঁচ বছরের জন্য গঠন করা হয়।