ইউরোপ-নির্ভরতা আরও বাড়ল

>
  • সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ইউরোপের পাশাপাশি ভারত ও জাপানে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে।
  • তবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হিস্যা কমেছে।

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি ইউরোপ থেকেই আসছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে  ইউরোপ–নির্ভরতা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির হিস্যা কিছুটা কমেছে।

বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ইউরোপের ২৮ দেশে থেকে এসেছে ২ হাজার ১৩৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৫৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ইউরোপের হিস্যা ছিল ৫৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আলোচ্য অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছর এই পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমছে। তবে হিস্যা কমলেও বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি বাজারের তালিকায় ১ নম্বরেই রয়েছে দেশটি। দেশভিত্তিক হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপের জার্মানি।

এদিকে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি করে এমন দেশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯টিতে। নতুন ও সম্ভাবনাময় বাজারের মধ্যে ভারত ও জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে হঠাৎ করেই রপ্তানিতে ধস নেমেছে চীনের বাজারে। আয় কমেছে তুরস্কের বাজারেও। তবে রপ্তানি বাড়ছে অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ায়।

সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। তবে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমেনি, বরং বেড়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। তবে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে গেছে জার্মানির দখলে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া ৫৯৮ কোটি ডলারের মধ্যে ৫৩৫ কোটি ডলার এবং জার্মানিতে ৫৮৯ কোটি ডলারর মধ্যে ৫৫৭ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এখন সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে।

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পরে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি রপ্তানি বাজারের বাকি ৮টি হলো যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, কানাডা ও বেলজিয়াম। শীর্ষ ১০টি বাজারের ৯টিতেই রপ্তানি আয় বেড়েছে। কমেছে শুধু বেলজিয়ামে।

বাংলাদেশের শত কোটি ডলারের রপ্তানি বাজারের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজিত হয় জাপানের নাম। বিগত অর্থবছরে জাপানে বাংলাদেশ ১১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। দ্রুত রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে দেশের শীর্ষ ১০ রপ্তানি বাজারের মধ্যে ৮ নম্বরে উঠে এসেছে জাপান।

এদিকে প্রতিবেশী ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেশ বেড়েছে। বিগত বছর দেশটিতে বাংলাদেশ প্রায় ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশের অস্ত্র ও তামাকজাতীয় ২৫টি পণ্য বাদে সব পণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। যদিও এরপর রপ্তানিতে খুব বেশি গতি আসেনি। বিগত বছরই কেবল রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে চীন থেকে। দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে কমে গেছে। দেশটির বাজারে গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৬৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ কম।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডা। ফলে এসব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়া ভালো লক্ষণ। তবে বেশি ভালো হয় যদি নতুন বাজারে ও অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাড়ে। হাতে গোনা দুই-তিনটি বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা পণ্য রপ্তানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কারণে এসব বাজারে প্রচলিত পণ্যের চাহিদা কমে গেলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তারা সব সময়ই কাজ করেন। একই সঙ্গে সরকারের তরফ থেকেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।