রড উৎপাদনে টনপ্রতি ব্যয় কমবে ৭০ টাকা!

  • বাজেটে শুল্ক ছাড়
  • দুটি কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দিলেও রডের উৎপাদন ব্যয় ও দামে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন শিল্পমালিকেরা।

বাজারে নির্মাণ উপকরণ রডের দাম সামান্যই কমেছে। পণ্যটির দাম যেখানে প্রতি টন ৫২ হাজার থেকে বেড়ে ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছিল, তা এখন ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি টন রডের দাম ১৮ হাজার টাকা বেড়েছিল। সেখানে গত দুই মাসে দাম কমেছে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। আগামী শীতে নির্মাণকাজের মৌসুম শুরু হলে রডের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করেন ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা।

এদিকে এই নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে বাজেটে দুটি কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এতে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, শুল্কছাড়ের ফলে টনপ্রতি রডের উৎপাদন ব্যয় মাত্র ৫০-৭০ টাকা কমতে পারে।

দেশে চলতি বছরের শুরুতে রডের দাম ব্যাপক বেড়ে যায়। গত এপ্রিলে বিভিন্ন কোম্পানির ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম ৭০ হাজার টাকার ওপরে এবং ৪০ গ্রেডের দাম ৬৩-৬৪ হাজার টাকায় উঠেছিল। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল, কাঁচামালের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চহার এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্বই রডের মূল্যবৃদ্ধির কারণ।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ খাতের রাসায়নিক ফেরো এলয়ের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়েছেন। অন্যদিকে স্পঞ্জ আয়রনের সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি ২০০ টাকা কমিয়ে ৮০০ টাকা করেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো-রিরোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটে ইস্পাত খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক ফেরো এলয়ের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানোয় উৎপাদন খরচ টনপ্রতি ৫০-৭০ টাকা কমতে পারে। স্পঞ্জ আয়রনের সুনির্দিষ্ট শুল্ক কমানোর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, এটি সাফটা চুক্তির আওতায় ভারত থেকে বিনা শুল্কে আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, ‘বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও তেমন কমেনি।’

বর্ষা শেষে নির্মাণ মৌসুম শুরু হলে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বাড়বে। এতে রডের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করেন মানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি টন রডের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় এখন ৭৩-৭৪ হাজার টাকা। তাই চাহিদা বাড়লে উৎপাদনকারীরা লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

গত এপ্রিলে রডের দাম যখন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন রড উৎপাদন খরচের একটি হিসাব তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিল মাসে প্রতি টন রডের উৎপাদন খরচ ছিল ৫৭ হাজার ৭৫৮ টাকা।

এদিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে গ্যাসের দাম বাড়লে রডের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. মাসাদুল আলম বলেন, প্রতি টন রডে গ্যাসের দাম বাবদ ব্যয় হয় ৭ হাজার টাকার মতো। এখন শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭ টাকা। নতুন যেসব সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে প্রতি ইউনিটের দাম ১৪ টাকা ৯০ পয়সা ধরা হচ্ছে। এতে প্রতি টন রডের উৎপাদন ব্যয় ৭ হাজার টাকার মতো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।