এবার চায় হাজার কোটি টাকা

>বিজেএমসির অধীন পাটকলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের মজুরি এবং বেতন-ভাতা পরিশোধে টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি।

সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি বজায় রাখার কথা বলে পাট খাতের জন্য সরকারের কাছে এবার ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) স্বাবলম্বী করতে এবং এর অধীন পাটকলগুলোর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মজুরি এবং বেতন-ভাতা দিতে এই টাকার দরকার বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। ২৬টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিজেএমসি একটি লোকসানি সংস্থা।

পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম উল্লিখিত পরিমাণ টাকা চেয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সম্প্রতি একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন। এতে তিনি অর্থমন্ত্রীর ‘ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ’ কামনা করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এখন এই পত্র নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে বলে জানা গেছে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর ডিওতে বলা হয়েছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দফায় ১০০ কোটি করে মোট ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে বিজেএমসি। কিন্তু ১০০ কোটি টাকায় শ্রমিকদের মাত্র ১ মাসের বেতন-বোনাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে, অন্য বকেয়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজেএমসিকে একটি স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেই আলোকে একটি পঞ্চবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও ডিওতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিজেএমসি স্বাবলম্বী সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া মজুরিসহ বিজেএমসির বর্তমান দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক, শিক্ষকসহ স্থায়ী চাকরিজীবী এবং বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক মিলিয়ে সংস্থাটির জনবলসংখ্যা ৩৫ হাজার ১৬৫ জন। ২৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৭টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০টি এবং খুলনা অঞ্চলে ৯টি কারখানা রয়েছে। এগুলো দেখাশোনা ও সমন্বয়ের জন্য বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে দুটি। তবে একটি নন-জুট প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কটিই লোকসানি।

এদিকে বিজেএমসির পাটকলগুলোকে ঘিরে ১ হাজার ১৫৮টি মামলা রয়েছে। বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে জজকোর্ট ও শ্রম আদালতে।

সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজেএমসি যে ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে, তার আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে আবর্তক তহবিল বাবদ। এই টাকা চায় তারা একবারে। আর ৮০০ কোটি টাকা চায় শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া গ্র্যাচুইটি, মহার্ঘ ভাতা ও ভবিষ্য তহবিলের (পিএফ) জন্য নগদ ঋণ হিসেবে।

আবর্তক তহবিলের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা চাওয়ার যুক্তি হিসেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলেছিল, নগদ টাকার অভাবে প্রতিবছর বাকিতে এবং বেশি দাম দিয়ে বিজেএমসিকে কাঁচা পাট কিনতে হয়। এ জন্য বছরে গড়ে ৬৮ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়। হাজার কোটি টাকার একটি আবর্তক তহবিল থাকলে প্রতিবছর নতুন বরাদ্দের আর দরকার পড়বে না। অর্থাৎ এই তহবিলের আয় দিয়েই কাঁচা পাট কেনা যাবে।

অর্থ এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সম্প্রতি ঢাকার গুলশান এলাকার ১০ দশমিক ৩৩ বিঘা জমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে বিক্রি করেছে বিজেএমসি। ওই জমির দাম ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এই টাকাও পেয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পাট খাতকে লাভজনক করার অঙ্গীকার করেছিল। প্রায় ১০ বছর হতে চললেও সংস্থাটি একরকম আগের মতোই রয়ে গেছে। পাটকলশ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, ভাতা পরিশোধসহ পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পরিকল্পনা তুলে ধরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী তখনই বিজেএমসির অধীনে থাকা গুলশানের ১০ দশমিক ৩৩ বিঘা জমি বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহের নির্দেশ দেন।

সেই জমিই কিনে নেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ওই জমিতে রাজধানীর শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি হবে।

জমি বিক্রির টাকা পাওয়ার পরও এত টাকার দরকার কেন—জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই টাকা পাওয়া গেছে ভেঙে ভেঙে। একবারে পেলে সুবিধা হতো। ১ হাজার কোটি টাকা হলেই বিজেএমসিকে স্বাবলম্বী করা সম্ভব। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় অনেক সময় তা বুঝতে চায় না।’

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজেএমসিকে ৬ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

অদক্ষতা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য বিজেএমসি যে একটি লোকসানি সংস্থা, তা স্বীকার করেও মির্জা আজম বলেন, ‘লোকসান কমছে। অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা দিলে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো যাবে এবং লোকসান আরও কমবে।’