সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমছে!

>

• সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর বিষয়ে ৮ আগস্ট সভা।
• আর ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহার নয়-ছয় কার্যকর করার সিদ্ধান্ত।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে নয় ও ছয় শতাংশ কার্যকর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত কমবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংকের নয়-ছয় সুদহার কার্যকর করা হবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে অংশীজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোর আশ্বাস দিয়ে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও সুদহার কমায়নি বেশির ভাগ ব্যাংক। গত ১ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এক অঙ্কের সুদহার কার্যকরের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। সুদহার কমানোর ঘোষণায় সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে পুরো আর্থিক খাতে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এখন এসে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা বলছেন, ছয় শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমানতের সুদহারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার সমন্বয় করতে হবে। কারণ, বেশি সুদের আশায় ব্যাংকের আমানত ভেঙে অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনছে, ফলে টান পড়ছে আমানতে। 

গতকালের সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, দেশে কোনো তারল্য-সংকট নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক সুবিধা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমানতের সুদহার ছয় শতাংশের বেশি হবে না। ঋণের সুদহার নয় শতাংশ করতেই হবে। সেখানে কিছু ব্যাংকের আপত্তি আছে, বিশেষ করে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে।

 মুহিত আরও বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার আমরা পর্যালোচনা করব। সঞ্চয়পত্রের সুদহার মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করি। কোনো সময় দুই বছর, তিন বছর, আবার বছরেও হতে পারে। বাজারের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হলেই পর্যালোচনা করা হয়। এ নিয়ে আমরা ৮ আগস্ট সিদ্ধান্ত নেব। ৯ আগস্ট থেকে নতুন সুদহার কার্যকর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এটা করেছি। ৯ আগস্টের পর কেউ না মানলে আপনারা (সাংবাদিকেরা) রিপোর্ট করতে পারেন।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন সুদহার কার্যকর করেছে। ৯ আগস্ট থেকে সবাই করবে। আজকের সভায় সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যান ছিলেন। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংক পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ পেয়ে গেছে।’

ইআরডিতে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১ জুলাই থেকে আমরা নতুন সুদহার বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে আমরাও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে চাই। আমানতের সুদহারের বিষয়টা অর্থমন্ত্রী দেখছেন। আমানতের প্রভাবই পড়ছে ঋণের সুদে। আড়াই লাখ কোটি টাকা সরকারি আমানত আছে। এ আমানত পেলেই ঋণের সুদে প্রভাব পড়বে। আজকের সভায়, তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক পরিচালকেরা চেয়েছিল, সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের টাকা ছয় শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করুক। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে, ছয় শতাংশ সুদের সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়ে  নির্দেশনা দেবে।

আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের বেশি হওয়ায় তা কিছুটা কমানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে এ হার কতটা কমবে, তা ৮ আগস্ট বৈঠকে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।