সিঙ্গাপুর থেকে অর্থ এনে আরও বড় কাজ করব

মুহাম্মদ আজিজ খান
মুহাম্মদ আজিজ খান
>সামিট গ্রুপ। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের এই শিল্প গ্রুপ সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামে সিঙ্গাপুরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। সম্প্রতি মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ২৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল, এলএনজিভিত্তিক ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একাধিক ব্যবসায়িক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বিনিয়োগ, বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সামিট গ্রুপের কর্ণধার ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন


প্রথম আলো:
আমরা জানি, সামিট গ্রুপ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশ ছেড়ে কেন বিদেশে চলে গেলেন?

মুহাম্মদ আজিজ খান: আমাদের সব ব্যবসা বাংলাদেশে। তাই বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছি, কথাটা ঠিক নয়। বরং বাংলাদেশের জন্যই বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। আমরাও বিদেশে আমাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছি দেশের ও আমাদের কোম্পানির সুনাম বৃদ্ধি করতে।

বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য কতটা আকর্ষণীয়, তা এখন আমরা সরাসরি তুলে ধরতে পারছি। এখানে একটি বিষয় আমি গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, আমরা সিঙ্গাপুরে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) হাত ধরে। তারা (আইএফসি) ওখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা মূলধন হিসেবে এ বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে কয়েক শ মিলিয়ন ডলারের ঋণও দিয়েছে আইএফসি। অর্থাৎ আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহযোগিতায় আমরা সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য, সিঙ্গাপুর থেকে অর্থ এনে বাংলাদেশে আরও বড় বড় কাজ করা।

প্রথম আলো: তার মানে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে আরও সহজে অর্থ সংগ্রহ করে তা দেশে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছেন?

আজিজ খান: অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিও মূল উদ্দেশ্য। অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সুনামের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। কিছুদিন আগে আমরা গাজীপুরে ৩০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মাত্র ৯ মাসে নির্মাণ করেছি। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে থাকায়।

পৃথিবীতে এত কম সময়ে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র আগে আর হয়নি। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা ঘাটে ৫৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি হবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। আশা করছি, ২০২০ সাল নাগাদ এটি উৎপাদনে চলে আসবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ীতে এলএনজিভিত্তিক ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৩০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৩ লাখ ৬০ হাজার মিটার কিউব এলএনজি টার্মিনাল করার জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছি সরকারকে। ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ৭ হাজার কোটি টাকার মূলধনের দরকার। বাকিটা ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। এত বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রথম আলো: তাহলে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করায় সহজে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছেন?

আজিজ খান: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিঙ্গাপুর একটি ‘এএএ’ ঋণমানের দেশ। আর বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’। তাই স্বাভাবিকভাবে সিঙ্গাপুর থেকে যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা বলছি, তখন অনেক কম সুদে ও সহজ শর্তে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ ও মূলধন সংগ্রহ করতে পারছি। ঋণ বা মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোম্পানির সুনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরুর পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোম্পানির সুনাম আরও বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সুনাম উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনামও বাড়বে।

প্রথম আলো: আমরা জেনেছি, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামে সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটিকে সেখানকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। তালিকাভুক্তির অগ্রগতি কতটুকু?

আজিজ খান: সিঙ্গাপুরের স্টক মার্কেট এসজিএক্স থেকে আমরা এরই মধ্যে ইটিএল (এনটাইটেলমেন্ট টু লিস্ট) পেয়ে গেছি। এখন যেকোনো সময় চাইলে আমরা এটিকে তালিকাভুক্ত করতে পারি। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যে শুল্কযুদ্ধ চলছে, তাতে নতুন শেয়ারের প্রতি বাজারের লোকজন যথাযথ দৃষ্টি দিতে পারছেন না। তাই কৌশলগত কারণে আমরা কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছি।

প্রথম আলো: দেশে বড় বিনিয়োগ আনতে আপনারা বিদেশে কার্যক্রম শুরু করেছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ স্থবিরতা কেন?

আজিজ খান: বিনিয়োগ বাড়ছে না, এ কথাটা ঠিক নয়। বিনিয়োগ বাড়ছে। আপনি যদি পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সবার আগে দরকার বাজার চাহিদা তৈরি করা। আমাদের এমন পণ্য তৈরি করতে হবে, যার দেশে ও বিদেশে চাহিদা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি মানসম্মত বিক্রয়যোগ্য পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ আসবেই। তার বড় প্রমাণ এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটি করতে হলে মানসিকতা ও শিক্ষার মান উভয়ই উন্নত করতে হবে।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু তার সুফল কর্মসংস্থানে মিলছে না। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই এখন সবচেয়ে বেশি। একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে, অন্যদিকে বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। এটি কেন হচ্ছে?

আজিজ খান: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, শিক্ষার মান ও সময়োপযোগী শিক্ষা। সময়োপযোগী শিক্ষায় আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছি। শিক্ষার সঙ্গে সময়ের তথা সমাজের প্রয়োজনীয়তার সংযোগ ঘটাতে হবে। সেখানেই আমাদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। আবার আমাদের সমাজব্যবস্থায় দক্ষতা ও অদক্ষতা ঘাটতিও প্রকট। এ কারণে শিল্পমালিকেরা একদিকে যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছেন না, অন্যদিকে শিক্ষিতরা তাঁদের পছন্দের চাকরি পাচ্ছেন না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে শিল্পসংক্রান্ত পড়ালেখা বাড়াতে হবে।

প্রথম আলো: দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী কী বলে মনে করছেন আপনি?

আজিজ খান: বাংলাদেশ প্রতিদিনই বিনিয়োগবান্ধব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত অনেক আইনকানুন, বিধিবিধান এখনো সময়োপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আইনকানুনেরও ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকার বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণে সুযোগ দেওয়া হয়নি, যে কারণে একধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার এলএনজি ব্যবসার ক্ষেত্রে সময়োপযোগী কোনো আইন নেই। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি সমস্যা।

প্রথম আলো: অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি বলে থাকেন, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে এ দেশে ভালোভাবে ব্যবসা করা যায় না। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

আজিজ খান: বিশ্বে এমন কোনো দেশ কি আছে, যেখানে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে ভালোভাবে ব্যবসা করে বড় হওয়া যায়? গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যেকোনো সরকার গঠিত হয় জনগণের পছন্দে। কাজেই সেই সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত। আর আমি একজন দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হলে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া সেটি হবে না।

প্রথম আলো: আমরা দেখছি কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তাতে জীবনযাত্রা ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

আজিজ খান: বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে এলএনজি ও ভারী জ্বালানি তেল (হেভি ফুয়েল অয়েল বা এইচএফও) আমদানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব জ্বালানির দামের ওপর। তবে আমি মনে করি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে করা দরকার। তাতে যদি এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি দেওয়া উচিত। দেশের মাথাপিছু আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে আমি মনে করি।

প্রথম আলো: এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এ বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত?

আজিজ খান: এখানে প্রথমত আমি বলতে চাই, কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নামকরণটিই ভুল। এগুলোর নাম হওয়া দরকার ছিল পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। অর্থাৎ পিক আওয়ারে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত সময়টাতে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়টাতে ভারী জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উত্তম সমাধান। অন্য সময়ের জন্য গ্যাসচালিত কম্বাইন্ড সাইকেল ও বেইজড লোড বিদ্যুৎকেন্দ্র ভালো সমাধান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে মেরিট অর্ডার ডিসপোস ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহব্যবস্থা পরিচালনা করছে। তাই কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়।

প্রথম আলো: দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। সামিট গ্রুপকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আজিজ খান: যেকোনো বড় পরিকল্পনার জন্য বড় ভিত হচ্ছে বড় মন নিয়ে বড় চিন্তা করা। বর্তমানে আমার চেষ্টা নিজের চিন্তাকে বড় করার পাশাপাশি আমার সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিন্তার জগৎটাকেও বড় করে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, আমার সহকর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের কর্মদক্ষতা রয়েছে। এ কারণে আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যাত্রা শুরু করতে পেরেছি। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্নও বড় হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক যে অগ্রগতি, তা সত্যিই গর্ব করার মতো। তাই ব্যবসার পরিকল্পনা ও আর্থিক সামর্থ্য মিলিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি। ১০ বছর পর সেটিকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে চাই। আর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ, প্রতিটি ঘরে ফাইবার অপটিক সেবা এবং প্রত্যেক আমদানি-রপ্তানিকারককে সেরা বন্দর-সেবা দিতে পারি, সেটাই লক্ষ্য।

প্রথম আলো: বর্তমানে সামিট গ্রুপের কত ধরনের ব্যবসা রয়েছে? সিঙ্গাপুর ছাড়া দেশের বাইরে আর কোথায় আপনাদের ব্যবসা রয়েছে?

আজিজ খান: বিদ্যুৎ, ফাইবার অপটিক, বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসা, পোর্ট, এলএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পাটনায় আমরা দুটি ইনল্যান্ড ওয়াটার পোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। আন্তর্জাতিক নিলামে অংশ নিয়ে আমরা এ কাজ পেয়েছি। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে পশ্চিমবঙ্গে গার্ডেন রিচ টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হবে। সেটি হলে বেনাপোল দিয়ে দ্রুতগতিতে ও কম খরচে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হবে।

প্রথম আলো: আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী? কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?

আজিজ খান: আমি স্বপ্ন দেখি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তি ও ভালোবাসার বাংলাদেশের, যেখানে মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকবে। দেশের পিছিয়ে থাকা ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলে আনতে কাজ করতে চাই। এ জন্য আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত অর্থে এক হাজার কোটি টাকার একটি ফাউন্ডেশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শান্তি, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এ ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

একনজরে সামিট গ্রুপ

যাত্রা শুরু ১৯৮৫ সালে

ব্যবসার ধরন: বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ফাইবার অপটিক, পোর্ট ইত্যাদি

বার্ষিক আয়ের পরিমাণ: প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা

মোট কর্মসংস্থান: ৩ হাজার

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত: ২টি কোম্পানি।

সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু: ২০১৬ সালের জুলাইয়ে।