১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব সিপিডির

সিপিডি আয়োজিত ‘মিনিমাম ওয়েজ অ্যান্ড লাইভলিহুড কন্ডিশনস অব আরএমজি ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো
সিপিডি আয়োজিত ‘মিনিমাম ওয়েজ অ্যান্ড লাইভলিহুড কন্ডিশনস অব আরএমজি ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো

সন্তান আছে তৈরি পোশাকশিল্পের এমন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে সিপিডি। আর যাঁদের সন্তান নেই, এমন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৯ হাজার ২২৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘মিনিমাম ওয়েজ অ্যান্ড লাইভলিহুড কন্ডিশনস অব আরএমজি ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক সংলাপে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আজ রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি ষষ্ঠ গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার ২৮ টাকা মজুরির প্রস্তাব করেন। দ্বিতীয় গ্রেডের জন্য ১৫ হাজার ৩৩৮ টাকা এবং প্রথম গ্রেডের জন্য মোট বেতন আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রমিকনেতারা এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘জীবনযাপনের ব্যয়ের নিরিখে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা নিয়ে চিরকালই বিবাদ হবে। আজ থেকে ৫৫ বছর আগেও এ নিয়ে মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব হয়েছে এবং এখনো তা চলছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না এলে ধারণা করি, আমার নাতি-নাতনিরাও এই বিবাদ দেখবে। মজুরি নির্ধারণের এই পদ্ধতিকে পশু অ্যাপ্রোচ আখ্যা দেওয়া যায়। কিন্তু শ্রমিকেরা তো মানুষ, তাঁদের যেহেতু মন আছে, সেহেতু তাঁদেরও উৎসাহের দরকার আছে। মজুরি নির্ধারণে এই দিকটি বিবেচনা করা দরকার।’ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, শ্রমিকেরা যেহেতু মানুষ, সেহেতু অর্থনীতিতে বা কর্মক্ষেত্রে তাঁরা কীভাবে সম্পৃক্ত থাকেন এবং কত মজুরি পান, তার সঙ্গে উৎসাহিত হওয়ার সম্পর্ক আছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মজুরি নিয়ে আলোচনায় বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। পোশাকশ্রমিকরাই মূল চালিকাশক্তি। সে কারণে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের সময় বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে, অন্যথায় এই ঝগড়া চিরস্থায়ী হবে।

সিপিডির তুলে ধরা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাবের শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার বলেন, এটি বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চারজনের পরিবার হিসাব করে দুই বছর আগে ১৬ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু এখন সেটাও যথেষ্ট নয়; বর্তমান বাজারের নিরিখে তা হবে ৩২ হাজার টাকা। আর বিজিএমইএর সভাপতি মজুরি বোর্ডে যে প্রস্তাব করেছেন, তা অবিশ্বাস্য রকম কম। আমাদের বিশ্বাস, প্রগতিশীল মালিকেরা তাঁর প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নন।’
শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা আরও বাড়াতে হলে তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। শ্রমিক এলাকায় সন্ধ্যার সময় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেলে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিক অঞ্চলের বাড়ির মালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণ করেন। তাই শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও লাভ হবে না, অতিরিক্ত মজুরি বাড়ির মালিকের পকেটে যাবে। সে জন্য তিনি আইন অনুযায়ী এলাকাভেদে বাড়ি নির্ধারণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।