অনলাইন ব্যবসায় ধস

>

• ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা শনিবার ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয় সরকার
• এতে মূলত মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়
• অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-সেবা প্রায় বন্ধ ছিল
• সেবা বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ
• ব্যবসা এক দিনে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে

ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতির কারণে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা ও সেবা কার্যক্রম গতকাল রোববার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে মোবাইল ফোন অপারেটররা ইন্টারনেট ডেটা বিক্রি করতে পারেনি। উবার, পাঠাও, সহজের মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপের সেবাও প্রায় বন্ধ ছিল। অনলাইন কেনাকাটাতেও সমস্যায় পড়েছেন গ্রাহকেরা।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তাদের ব্যবসা এক দিনে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি সব মিলিয়ে এসব সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি ও থ্রি-জি সেবা গত শনিবার ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে মূলত মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেটের এমন অবস্থার কারণে গতকাল দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকায় এক সপ্তাহ ধরে গণপরিবহন সেবা একেবারে নেই বললেই চলে। সে জন্য রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি উবার, সহজে ও পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা ব্যবহার করে নিজেদের গন্তব্যে যাওয়া-আসা করছেন অনেক রাজধানীবাসী। কিন্তু গতকাল ঢাকার মানুষ সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। কারণ মোবাইল ফোন থেকে রাইডের জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেননি ব্যবহারকারীরা।

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়মিত অফিসে যাতায়াতকারী শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও উবার, পাঠাও ডাকতে পারিনি। এরপর অনেক কষ্টে হেঁটে, বাকি পথ রিকশায় করে অফিসে গিয়েছি।’

তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ও মোড়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের চালকেরা ডেকে ডেকে যাত্রী পরিবহন করেছেন। এমন অনেক চালককে গতকাল চুক্তি ভিত্তিতে এয়ারপোর্ট গোলচত্বর মোড় থেকে গুলশান, বনানী এলাকা পর্যন্ত আসতে ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। এতে চালকের আয় হলেও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হয়েছে তাদের প্রাপ্য আয় থেকে। উপায় না থাকায় অনেক লোককে এভাবে চুক্তিতে মোটরসাইকেলে চেপে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। এমন দৃশ্য ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, গুলশানসহ আরও অনেক এলাকায় চোখে পড়েছে।

রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসেইন এম ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, রাইড শেয়ারিং সেবা পুরোপুরি মোবাইল ইন্টারনেটনির্ভর। তাই ইন্টারনেট না থাকলে এ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি ইন্টারনেটের গতি যদি ধীর হয় ও ধারাবাহিক না থাকে, তাহলে দূরত্ব অনুসারে ভাড়া নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। গতকাল ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে পাঠাওয়ের সব ধরনের সেবা ব্যাহত হয়েছে। তিনি জানান, রাইড শেয়ারের পাশাপাশি বর্তমানে পাঠাও পার্সেল, পাঠাও ফুড ও পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিস নামের আরও তিনটি অনলাইনভিত্তিক সেবা দিচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। এ সেবাগুলোও ব্যাহত হয়েছে।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া হিসাবে, ঢাকায় প্রতিদিন উবার ও পাঠাওয়ের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ হাজার রাইড নেন যাত্রীরা। সেটি গতকাল ৩ হাজারের নিচে নেমে যায়। এ ছাড়া ছোট ছোট অন্য রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সেবাও একইভাবে কমেছে।

রাইড শেয়ারের পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসাতেও গতকাল ধস নামে। অনলাইনভিত্তিক টিকিট বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান বিডিটিকেটসে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র তিনটি টিকিট বিক্রি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০টি বাসের টিকিট বিক্রি করে। গতকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান পরিবহন ধর্মঘট ও ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ঈদের টিকিট বিক্রিও করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

জানতে চাইলে বিডিটিকেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক জামি প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেটের ধীরগতির ধাক্কায় ই-কমার্স ব্যবসা এক দিনে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য নিয়ে এমন পরিস্থিতির ধারণা পাওয়া গেছে। ইক্যাবের নিবন্ধিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন প্রায় ৭৫০।
প্রতিষ্ঠিত আরও একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম, চালডাল, সহজের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ব্যবসা পরিচালনায় গতকাল তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে ক্রয়াদেশ পাওয়া পণ্য ঢাকার বাইরে ক্রেতার কাছে পাঠাতে গিয়ে। এমনকি ঢাকা শহরের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়েছে।

ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক
২৪ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা থেকে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এক দিনে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার প্রায় ২০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস প্রতি সেকেন্ড) কমেছে। দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররাই মূলত এ ব্যান্ডউইডথের ব্যবহারকারী।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৩ শতাংশ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এ দেশে এখন সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭৭ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করেন ৮ কোটি ২০ লাখ।