পণ্যের চালানে নিরাপত্তা সিল

>
  • এর আগে দুবার বিধিমালা জারি হয়
  • ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন করে আবার ইলেকট্রনিক সিল ও লক সেবা বিধিমালা, ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এর আগে গত তিন বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুবার এই বিধিমালা জারি করেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে সেবাটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

বিধিমালা অনুযায়ী আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের চালানে নিরাপত্তার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সিল বা লক সেবা নিতে হবে। তবে এই বিধিমালায় আগেরটির চেয়ে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

এদিকে, ব্যবসায়ীরা আগের মতো এবারও সিল ও লক সেবার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়ায় আপত্তি জানাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের খরচ বাড়বে। পণ্য রপ্তানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই পণ্য জাহাজীকরণ করা হয়।

এনবিআরের বিধিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই লক বা সিল সেবা দেওয়া হবে। আমদানি বা রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারে ইলেকট্রনিক সিল ও লক সেবা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতি কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাক পণ্য সিল বা লক করা যাবে। সিল বা লক সেবার বিপরীতে প্রথম ৪৮ ঘণ্টার জন্য ৬০০ টাকা দিতে হবে। এর পরের প্রতি ঘণ্টায় ৫০ টাকা করে দিতে হবে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের সিল বা লকের প্রয়োজন নেই। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা যথাযথ সিল বা লকের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করেই পণ্যের চালান কারখানা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাই। এভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি কনটেইনারে খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তাহলে কেন ১০০ মিটার পথের জন্য ৬০০ টাকা দেব?’

সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, এনবিআরের নতুন উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়বে। এমনিতেই রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থায় নতুন করে খরচ বাড়ানো হচ্ছে। মালিকেরা তা মানবেন না।

এনবিআর সম্প্রতি সিল ও লক সেবা বিধিমালা জারি করেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি বা রপ্তানি করা পণ্য চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) বা অফডকে পরিবহনের সময় সিল বা লক নিতে হবে। এটি মানা এখন বাধ্যতামূলক।

এই নিরাপত্তাব্যবস্থার সংজ্ঞা সম্পর্কে এনবিআরের বিধিমালায় বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিক সিল হচ্ছে অবৈধভাবে ঘষামাজা বা পরিবর্তন প্রতিরোধ-সক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তির উচ্চ ক্ষমতার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন ডিভাইসেস (আরএফআইডি) সংবলিত সিল। এটির বাহ্যিক গড়নে লক সংযুক্ত থাকে বলে তা পণ্যের কনটেইনারের নিরাপত্তা বিধান করে। আর লক হচ্ছে কনটেইনারে ব্যবহারের উপযোগী লক বা তালা, যা আরএফআইডি-ভিত্তিক সিল সংযুক্ত থাকে। তাই এটি চাবি দিয়েই খুলতে ও বন্ধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিজে এই লক বা সিল সেবা দেবে না। তবে সেবাটি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরপর ‘বিল্ড ওন অপারেট’ পদ্ধতিতে ব্যবস্থাটি পরিচালিত হবে। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিতে এনবিআরের একজন সদস্যের (শুল্কনীতি) নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে। সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সামনেই কনটেইনার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান সিল বা লক করা হবে। এ সময় শুল্ক কর্মকর্তারাও থাকবেন। এরপর গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সিল বা লকের অখণ্ডতা যাচাই করে তা খোলা হবে।

বছর তিনেক আগে সিল বা লকের বিষয়টি প্রথমে সামনে নিয়ে আসে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তখন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে জানায়, বন্দর থেকে খালাসের জন্য প্রতি মাসে ১০ হাজার কনটেইনার চট্টগ্রাম কাস্টমসে আসে। মূলধনি যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কের বাণিজ্যিক পণ্যও থাকে। আবার বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগও বহুদিনের। প্রচলিত সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহারের পরিবর্তে পণ্যের অধিকতর নিরাপত্তাব্যবস্থা-সংবলিত ইলেকট্রনিক সিল ও তালা ব্যবহার করা হলে চালানগুলোর গতিবিধি সার্বক্ষণিকভাবে নজরে রাখা সম্ভব হবে।

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে পতেঙ্গা কাঠগড়ের আইসিডি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে যাচ্ছিল ২০ লাখ পিস জিনস। পথে সিলগালা খুলে ৩৫১ কার্টন জিনস সরিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ দল। পরে পুলিশের অভিযানে তারা ধরা পড়ে এবং আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে এমন ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।

এরপর ২০১৬ সালে এ ধরনের একটি বিধিমালা করা হয়। কিন্তু আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের আপত্তির মুখে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৭ সালে আবারও একই ধরনের বিধিমালা জারি করা হয়। সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার নতুন করে বিধিমালা জারি করা হলো, যদিও আগের দুবার বিধিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।