খেলাপির শীর্ষে পোশাক খাত

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন কারখানা করে ব্যবসা বাড়িয়েছেন। আবার শর্ত মেনে কারখানা করতে না পেরে ব্যবসাও ছেড়েছেন অনেক ছোট ব্যবসায়ী। এ কারণে ২০১৭ সালে পোশাক খাতে ঋণ যেমন বেড়েছে, খেলাপি ঋণও বেড়েছে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য মিলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭ সালে পুরো ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। আর ২০১৭ সালে এসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ১২ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে এসে পোশাক খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৭৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই বছরে এ খাতের খেলাপি ঋণও বেড়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল শেষে পোশাক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।

পোশাক খাতের পাশাপাশি বস্ত্র খাত তথা টেক্সটাইল খাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছর শেষে এ খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৫৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। গত বছর শেষে বস্ত্র খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরে অনেক পোশাক ব্যবসায়ী নতুন কারখানা করেছেন। আবার অনেকে নিয়ম মেনে কারখানা করতে না পারায় ব্যবসাও ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণেই পোশাক খাতে ঋণও বেড়েছে, খেলাপিও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৬ সালে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। একই সময়ে খেলাপি ঋণও ৬২ হাজার ১৭০ কোটি থেকে বেড়ে হয় ৭৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।

পোশাক ছাড়া অন্যান্য বড় শিল্পে ২০১৬ সালে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে এসব শিল্পের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। ২০১৬ সালে বড় শিল্প খাতে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে এসে তা কমে হয়েছে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা।

নির্মাণশিল্প খাতে গত বছর শেষে ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে এ খাতের খেলাপি ঋণ আগের বছরের ৩ হাজার ৯৭০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত বছর শেষে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। একই সময়ে এ খাতে খেলাপির পরিমাণ কমে হয়েছে ১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা—২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে ২০১৭ সালে ভোক্তা ঋণও বেশ বেড়েছে। বছর শেষে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ২৩০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। তবে গাড়ির ঋণ কমে গেছে। গত বছর শেষে ভোক্তা ঋণের মধ্যে গাড়ির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকায়, যা আগের বছর ছিল ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। গাড়ির ঋণ কমলেও বেড়েছে বাড়ি বা আবাসন ঋণ। ২০১৭ সাল শেষে আবাসনের জন্য ভোক্তা ঋণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৯০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এ খাতে ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন খাতে যেসব ঋণ গেছে, তা এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে আসেনি। জাহাজ নির্মাণ খাতও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।’