১২ হাজার কোটি টাকার আপত্তি

মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার বিরুদ্ধে মোট ১২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার নিরীক্ষা বা অডিট আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা আপত্তির পরিমাণ ১১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আর রবির ৮৬৭ কোটি টাকা। নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ পরিশোধে রবিকে ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি। আর নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে গ্রামীণফোনের আপত্তি আরেকবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে বিটিআরসির এ নিরীক্ষা আপত্তিকে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক অভিহিত করেছে রবি। গ্রামীণফোন বলছে, নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে তাদের আলোচনা এখনো চলছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।

গ্রামীণফোন ও রবিতে বিটিআরসির এ নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। এ জন্য দুটি আলাদা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সিএ ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গ্রামীণফোনের নিরীক্ষার দায়িত্ব পায় তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি সিএ ফার্ম। আর রবির নিরীক্ষার দায়িত্ব পায় মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি। নিরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয় ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অপারেটর দুটি ১৯৯৬ সালে লাইসেন্স পায়।

তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানির বিটিআরসিতে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রামীণফোনে বিটিআরসির বকেয়ার পরিমাণ ৭ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। আর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ এনবিআরের বকেয়া ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। তবে কোন কোন খাতে এসব নিরীক্ষা আপত্তি দেওয়া হয়েছে, তা বিটিআরসির কমিশন বৈঠকের কার্যপত্রে পরিষ্কার করা হয়নি। কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের মে মাসে তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি বিটিআরসিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

>নিরীক্ষা আপত্তিকে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক বলছে রবি। আর এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে নারাজ গ্রামীণফোন।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোন লিখিত বক্তব্যে জানায়, নীতিগতভাবে কোনো প্রকার গুজব বা কল্পনাপ্রসূত বিষয়ে গ্রামীণফোন মন্তব্য করে না। তবে বিটিআরসির নিয়োগ করা সিএ ফার্মের মাধ্যমে সিস্টেম অডিটের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার আগে স্বাভাবিক নিয়মে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আলোচনার পরই এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

এদিকে মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদন অনুযায়ী রবির নিরীক্ষা আপত্তির পরিমাণ ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। হ্যান্ডসেট রয়্যালটি, তরঙ্গের মূল্য পরিশোধ, লাইসেন্স ফি, কর, ভ্যাটসহ মোট ৪০টি বিষয়ে এসব নিরীক্ষা আপত্তি তোলা হয়েছে। এর মধ্যে বিটিআরসির বকেয়া দাবি করা হয়েছে ৬৭৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আর এনবিআরের বকেয়া ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যদিও প্রাথমিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষা আপত্তির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তবে বিটিআরসি, সিএ ফার্ম ও রবির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে আপত্তির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

জানতে চাইলে রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, এই ত্রুটিপূর্ণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব পাওনা দাবিকে রবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তথাকথিত এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা যাচাইয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে রবির বিরুদ্ধে আর্থিক দাবি প্রতিষ্ঠায় বেশি মনোযোগী ছিল।

ইকরাম কবীর আরও বলেন, ‘নিরীক্ষার সময় প্রথা অনুযায়ী নিরীক্ষা কোম্পানি আমাদের মতামত না নেওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। নিরীক্ষা কোম্পানির টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা এবং এ শিল্পের বিকাশের ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। বিশ্বের নামকরা সবচেয়ে বড় যে চারটি নিরীক্ষা কোম্পানি রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কাউকে দিয়ে নিরীক্ষাটি পুনরায় করাতে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করব।’

বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ গ্রামীণফোন ও রবিকে পরিশোধ করতে হবে। যদি তারা সেটা না করে, তাহলে আইন অনুযায়ী কমিশন ব্যবস্থা নেবে।