ফরাছতসহ চার পরিচালক বাদ

>
  • ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যাঁদের নাম এসেছিল, তাঁদের সবাই বাদ পড়লেন।
  • ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর আর্থিক পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে।

প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আরও তিন পরিচালককেও নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাঁরা হলেন নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী, পরিচালক এ বি এম আবদুল মান্নান ও মো. আমির হোসেন। এর ফলে এনআরবিসি ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতিতে যেসব পরিচালকের নাম এসেছিল, তাঁদের সবাই ব্যাংকটির পরিচালনা থেকে বাদ পড়লেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মঙ্গলবার এক চিঠির মাধ্যমে চার পরিচালককে বাদ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা পাঠায়। এনআরবিসি ওই দিনই তাদের ওয়েবসাইট থেকে চার পরিচালকের নাম সরিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ২১ জুলাই এনআরবিসি ব্যাংকের পঞ্চম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ১৭ জন পরিচালককে নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে মুনসেফ আলী ছাড়া বাকি ১৬ জনকে পরিচালক পদে নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে ২৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় এনআরবিসি ব্যাংক। আইন অনুযায়ী, পরিচালক পদে নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ জনকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। বাকি ৬ জনকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন তাঁদের অনুমোদন দেওয়া হয়নি, তার কারণও চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে।

জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল এস এম পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনা হচ্ছে।’

গত মঙ্গলবার এনআরবিসি ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সাবেক চেয়ারম্যান ফরাছত আলীর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারার আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এ কারণে তাঁকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া গেল না। ৪৬ ধারা অনুযায়ী, পরিচালকদের অপসারণ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ছাড়া তৌফিক রহমান চৌধুরীকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তিনি নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করেছেন। সভায় উপস্থিত না থাকার পরও কাগজপত্রে তাঁদের হাজির হিসেবে দেখিয়েছেন। এ ছাড়া বিধিবিধান লঙ্ঘন করে এজি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেগমগঞ্জ ফিড মিলের ঋণ মঞ্জুর করেন তিনি।

পরিচালক হিসেবে এ বি এম আবদুল মান্নান ও মো. আমির হোসেনকে অনুমোদন না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাঁরা বেনামে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ধারণ করছেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এসেছে, এ বি এম আবদুল মান্নানের হাতে ব্যাংকটির যে শেয়ার রয়েছে, তার প্রকৃত মালিক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও এজি গ্রুপের কর্ণধার শহীদুল আহসান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ক (২) ধারার লঙ্ঘন এবং ১৪ ক (৩) ধারা অনুযায়ী এ শেয়ার বাজেয়াপ্ত হওয়ার যোগ্য।

অন্যদিকে এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক আমির হোসেনের হাতে যে শেয়ার রয়েছে, সে শেয়ারের মূলধন জোগান দেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের পরিচালক মাকসুদুর রহমান। আমির হোসেন দেশে না থাকায় তাঁর পক্ষে ব্যাংকটির বিকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাকসুদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান। আবার আমির হোসেন তাঁর হাতে থাকা শেয়ারের বিপরীতে যে লভ্যাংশ পেয়েছেন, তা জমা হয়েছে এম রহমান স্টিল মিলের হিসাবে, যা মাকসুদুর রহমানের মালিকানাধীন রতনপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ও এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের ঋণ নিয়মিত না হওয়ার তাঁদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি। ঋণ নিয়মিত হওয়ার পর এ দুজনকে পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত ব্যাংকটিতে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। ফরাছত আলীকে সরিয়ে নতুন চেয়ারম্যান হন তমাল পারভেজ। তবে ফরাছত আলী পরিচালক হিসেবে বহাল ছিলেন। আর গত ১২ জানুয়ারি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমান অপসারিত হন।

ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর আর্থিক পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে।