চার ব্যাংক দেবে ৬০০ কোটি টাকা

>
  • খেলাপি ঋণ নিয়ে ব্যাংকে বাড়তি সতর্কতা।
  • যেসব ট্যানারি গত বছর নেওয়া অর্থ ফেরত দিয়েছে, তারাই নতুন করে ঋণ পাচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর চামড়া কিনতে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক। এর বাইরে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও চামড়া কিনতে ঋণ দিচ্ছে। কোরবানির ঈদে চামড়া কিনতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায় বলে ব্যাংকগুলো এ ঋণ দিয়ে থাকে।

ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠিত ট্যানারির মালিকেরা এবার ঋণ পাচ্ছেন। যাঁরা গত বছরের ঋণের টাকা ফেরত দিয়েছেন, তাঁদেরই এবার ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪২ প্রতিষ্ঠানকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর ৪০ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় ৫২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সিটি, উত্তরাসহ কয়েকটি ব্যাংক এ খাতে আগের মতোই ঋণ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চামড়া কেনায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। ৭১টি গ্রাহকের কাছে ১৮টি ব্যাংক ওই ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৫ কোটি টাকা। তবে পুরো চামড়াশিল্পে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশির ভাগই খেলাপি।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, এর ৫০ শতাংশ আসে ঈদুল আজহায়। এ ছাড়া কোরবানিতে চামড়ার মানও ভালো থাকে। কারণ কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাদের বেশি যত্ন নেওয়ায় হয় এবং পশুর চর্মরোগ থাকে না। বড় ট্যানারিগুলো ঈদুল আজহায় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করে। প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগে ট্যানারির মালিকেরা আড়তদারদের পুরোনো পাওনা পরিশোধ করেন। এতে আড়তদারেরা নতুন করে ফড়িয়াদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন।

ট্যানারির মালিকেরা সাধারণত ঈদুল আজহার আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ বছর আগে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছিল, এবারও তারা ঋণ পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো জানায়, ঋণ অনুমোদনের আগে গ্রাহক কোনো ব্যাংকের খেলাপি কি না, তা যাচাই করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের আগের রেকর্ড ও ব্যবসায়িক সক্ষমতা যাচাই করে ব্যাংকগুলো নিজ নিজ পর্ষদে ঋণ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চামড়া কিনতে ২১০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে এ টাকা দিচ্ছে। গত ঈদুল আজহা উপলক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানকে ২০১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, যারা ভালো ব্যবসা করছে, শুধু তাদেরই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। খেলাপি কোনো গ্রাহক ঋণ পাচ্ছে না।

চামড়া খাতের প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদারকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে আছে জনতা ব্যাংক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সরকারি তহবিল থেকে রপ্তানি প্রণোদনা বাবদ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ও বিদেশে আটকে আছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ও সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।

রূপালী ব্যাংক এ বছর চামড়া কিনতে ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সামিনা ট্যানারি, বেঙ্গল লেদার ও এইচএনএইচ লেদার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে এ টাকা দিয়েছে রূপালী ব্যাংক।

অগ্রণী ব্যাংক এ বছরে ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকটির এ ঋণ পাচ্ছে বে ট্যানারি, ঢাকা হাইড, ডুয়েল ইন্টারন্যাশনাল ও এপেক্স ট্যানারি।

অগ্রণী ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল ইসলাম বলেন, যারা ঋণ শোধ করেছে, শুধু তাদেরই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সময়মতো রপ্তানি করতে না পারা ও স্থানান্তর সমস্যার কারণে চামড়া খাতটি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

সোনালী ব্যাংক এবারও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ভুলুয়া ট্যানারি, আমিন ট্যানারি ও কালাম ট্যানারি তাদের ঋণ পাচ্ছে।

এদিকে পুরান ঢাকার লালবাগের চামড়ার আড়ত পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশির ভাগ ট্যানারি তাদের পাওনা পরিশোধ করছে না। অল্প কিছু ট্যানারি পুরো অর্থ পরিশোধ করেছে। কিছু ট্যানারি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ দিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিস্থিতি এখনো আশানুরূপ নয়। আর মাত্র এক দিন ব্যাংক খোলা আছে। ফলে টাকা কতটুকু পাওয়া যাবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক ট্যানারিই বলে দিয়েছে, ঈদের আগে তারা টাকা পরিশোধ করতে পারবে না।