চট্টগ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিপাকে আড়তদারেরা

চট্টগ্রাম নগরের অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এই চামড়া পরে তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ছবিটি ঈদের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল।
চট্টগ্রাম নগরের অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এই চামড়া পরে তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ছবিটি ঈদের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল।

চট্টগ্রামে এবার প্রায় ৩০০ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচায় অংশ নিয়েছেন। পরিবহনশ্রমিক, চা-দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায় জড়িয়েছেন। বুধবার কোরবানির পর পাড়া-মহল্লা থেকে এসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেন। 

এসব মৌসুমি ব্যবসায়ীকে নিয়ে বিপাকে আড়তদারেরা। তাঁদের অভিযোগ, বেশির ভাগ সময় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার সঠিক দাম না জেনে বেশি দামে চামড়া কিনছেন। এতে তাঁদের কাছ থেকে আড়তদারদেরও বেশি দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে।
অনভিজ্ঞতা ও প্রতিযোগিতার কারণে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী। অনেক ক্ষেত্রে আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করে সঠিক দাম পাননি। আবার প্রতিযোগিতার কারণে অনেক আড়তদার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতেও চামড়া সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছেন।

নগরের চৌমুহনী মোড়ে প্রতিবারের মতো এবারও চামড়া ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন। এর মধ্যে মৌসুমি চামড়া বিক্রেতাদের সংখ্যা ছিল বেশি। সব সময়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা এসব মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে তা আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন।

আবদুল হাই নামে এক যুবক ১৫টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। বেলা তিনটায় তাঁর সঙ্গে চৌমুহনী এলাকায় কথা হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘গাড়ির হেলপারি করি। কোরবানি এলে কয়েকটি চামড়া সংগ্রহ করে বেচি। এতে কিছু টাকা লাভ থাকে।’
সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন কি না—জানতে চাইলে আবদুল হাই বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই।
একইভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আবু কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসায় নেমেছেন। তিনিও এবার ২০টির মতো চামড়া সংগ্রহ করে তা চৌমুহনী বাজারে এনে বিক্রির জন্য রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিনে কী করব বসে থেকে? তাই কিছু চামড়া কিনে বিক্রি করি।’

চট্টগ্রাম নগরের অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এই চামড়া পরে তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ছবিটি ঈদের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল।
চট্টগ্রাম নগরের অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এই চামড়া পরে তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ছবিটি ঈদের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল।

মো. নয়ন নামের এক যুবক পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মুরাদ নামে আরেক যুবক তাঁর সঙ্গে ব্যবসা করেন। দুজনই এবার প্রায় ১০০টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। নয়ন বলেন, সিটি গেট থেকে চামড়া কিনেছেন গড়ে সাড়ে ৫০০ টাকা করে। এখন তা বিক্রির জন্য চৌমুহনী বাজারে রেখেছেন।

সরাসরি পাড়া থেকে চামড়া সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীদেরও দেখা যায় চৌমুহনী এলাকায়। তাঁদের একজন মো. বেলাল বলেন, ‘একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। প্রতিবার ঈদের সময় চামড়া কিনে বেচি। এবারও পাড়া থেকে কয়েকটি চামড়া কিনে নিয়েছি। কিন্তু যে দামে কিনেছি, সে দামে বেচতে পারব কি না, জানি না।’

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের জন্য লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ওই দামে চামড়া সংগ্রহ কঠিন। কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে ফেলেন। এবারও তা-ই করেছেন। ফলে অনেক সময় প্রতিযোগিতার কারণে আমাদের আড়তদারদের বেশি দামে চামড়া কিনে নিতে হয়।
পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া কিনে প্রথমে চৌমুহনী বাজারে আসে। সেখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগী এবং ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে তা আতুরার ডিপোর চামড়ার আড়তে বিক্রি করে থাকেন।