মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দুষছেন আড়তদারেরা

হাজারীবাগে কিছু কিছু কারখানায় এখন শুধু চামড়া লবণ দিয়ে রাখা হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই এসব চামড়া চলে যাবে সাভারের হেমায়েতপুরে। ছবি: প্রথম আলো
হাজারীবাগে কিছু কিছু কারখানায় এখন শুধু চামড়া লবণ দিয়ে রাখা হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই এসব চামড়া চলে যাবে সাভারের হেমায়েতপুরে। ছবি: প্রথম আলো

চামড়ার আড়তদারদের অভিযোগ, দাম বাড়বে এই আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া হাতে রেখে দেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বেশি দামে চামড়া কিনে রাখেন। এ কারণে প্রথমে বিক্রি ভালো হলেও পরে নির্ধারিত দামের চেয়েও অনেক কম দামে তাঁদের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যা পর্যন্তও রাজধানীর কিছু কিছু জায়গায় কাঁচা চামড়ার স্তূপ দেখা যায়। ধানমন্ডি ৩ নম্বর থেকে গ্রিন রোডে ওঠার সড়কে চামড়া স্তূপ করে রাখা। সেখানে একজন জানান, এক ব্যবসায়ী পরে এসে নিয়ে যাবেন।

ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলেও হাজারীবাগে অল্প কিছু জায়গায় এবার চামড়া এসেছে। শুধু লবণ দিয়ে রাখা। প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সব যাবে সাভারের হেমায়েতপুরে। আজ শুক্রবার সকালে দেখা যায়, হাজারীবাগে তেমন তোড়জোড় নেই। বেশির ভাগ ট্যানারি বন্ধ। ‘ভাড়া দেওয়া হবে’ নোটিশ ঝুলছে। কিছু কিছু আড়তদার চামড়া কিনে লবণ দেওয়ার জন্য এখানে এনেছেন।

মো. রিয়াজউদ্দিন নামের এক আড়তদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু লবণ দেওয়ার জন্যই এখানে আশপাশের কিছু চামড়া আসে। আমরাও আজকের মধ্যে হেমায়েতপুরে সব নিয়ে যাব।’ চামড়ার দাম কমে যাওয়া নিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমেছে। তাই সরকারও গতবারের চেয়ে এবার কম দাম নির্ধারণ করে দেয়। তিনি জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাঁরা চামড়া কিনেছেন ৭০০ টাকা দরে, গতবার যা হাজারের ওপরে ছিল। পশু জবাইয়ের পরপরই ব্যবসায়ীরা প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরেই কাঁচা চামড়া কিনে নেন। কিন্তু ওই দাম ছিল লবণযুক্ত চামড়ার। এর ফলে আড়তদারেরা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে কিনেছেন।

চামড়া দ্রুত পচনশীল হওয়ায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে রাখতে হয়। নয়তো পচে যায়। ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আশায় আশায় ছিল, দাম বাড়বে। কিন্তু যে যত আশা করে ছিল, তার চামড়া তত পচেছে। শুরুতে তারা ১৫ থেকে ২০ ফুট চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও পরে গিয়ে অর্ধেকের কমে ছাড়তে বাধ্য হয়।’

রবিউল আলম আরও জানান, কাঁচা চামড়া কেনার পরে তা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। এ ছাড়া আগে হাজারীবাগে সব ট্যানারি ছিল বলে পরিবহনে তেমন খরচ হয়নি। কিন্তু ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তরিত হওয়াতে সেখানে পাঠানোর খরচও বেশি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের লক্ষ্য সারা দেশ থেকে ৭০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করার। ট্যানারির মালিকেরা সাধারণত লবণজাত চামড়া আড়তদারদের থেকে কিনে থাকেন। তবে এবার ঈদের দিন ট্যানারি মালিকেরা সরাসরিই প্রায় ১০ শতাংশ চামড়া কিনে নেন।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া নিয়ে লোকসানের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা কখনোই আমাদের দেওয়া দাম ফলো করে না। নিজেদের মতো করে কিনে নেয়। কিন্তু আমরা তো চামড়ার মান দেখে তাদের কাছ থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কিনে নিই।’ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম কম হওয়া প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী বলেন, চীন বেশ কিছুদিন থেকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য প্রতিযোগিতার প্রভাবে সারা বিশ্বেই চামড়ার দাম কম। তা ছাড়া হেমায়েতপুরে এখনো প্রক্রিয়াজাত চামড়ার কয়েক শ কনটেইনার এখনো পড়ে আছে।