ভারতে বিনিয়োগ করছেন বাফেট

ওয়ারেন বাফেট
ওয়ারেন বাফেট

ভারতে প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম ওয়ারেন বাফেট। বাফেটের কোম্পানি বার্কশায়ার হাথওয়ে ভারতের শীর্ষ মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পেটিএমে ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। আলোচনায় পেটিএমের মূল্যায়ন করা হয়েছে এক হাজার কোটি ডলার।

সিএনএন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই এই চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। ভারতীয় পত্রিকা মিন্ট-এ এই খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। তবে পেটিএম এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বার্কশায়ার হাথওয়ের মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।

শুধু বাফেটই নন, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বড় বিনিয়োগকারীরাও ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল বাজারে ঢুকতে চাইছে। গুগল গত বছর ভারতে টেজ নামের মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপ চালু করেছে। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপও একই ধরনের সেবা চালুর ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের গবেষণা পরিচালক ডি ডি মিশ্র বলেন, বাজারে নড়াচড়া অনেক বেড়ে গেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাবে। সে জন্য টিকে থাকতে হলে বাজারের গভীরে ঢুকতে হবে। যদিও ভারতীয়রা নগদ টাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেই বেশি পছন্দ করে।

কিন্তু ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের ৮৬ শতাংশ নগদ অর্থ বাতিল করেন। সে কারণে পেটিএমের মতো অনলাইন ওয়ালেটের বাজার সৃষ্টি হয়। ফলে এক মাসের মধ্যে পেটিএমের গ্রাহকসংখ্যা এক কোটি বেড়ে যায়।

এই মুহূর্তে পেটিএম ৩০ কোটি গ্রাহক নিয়ে ভারতের শীর্ষ মোবাইল পেমেন্ট ওয়ালেট। এ ছাড়া আমাজন ও ফ্লিপকার্টের ব্যবসায় ভাগ বসাতে তারা পেটিএম মল নামের এক অনলাইন খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে। তবে ওয়ালমার্ট গত বছর এটি কিনে নেয়।

গবেষণা সংস্থা ফিচ সল্যুশনসের বিশ্লেষক কেনি লিউ বলেন, ভারতে তরুণদের সংখ্যা বিপুল, খরচ করার মতো টাকাও এদের হাতে রয়েছে। সে কারণে মোবাইল পেমেন্ট সেবার জন্য ভারত খুবই আকর্ষণীয় এক বাজার। তিনি আরও বলেন, পরিণতিতে মানুষের ব্যয় বাড়বে। ই-কমার্সের যেমন বাড়বাড়ন্ত হবে, তেমনি পেটিএমের বাজারও বড় হবে।

বাফেট এর আগে ভারতীয় বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক টিভি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাজার হিসেবে ভারতের সম্ভাবনা অবিশ্বাস্য। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি ভালো কোনো ভারতীয় কোম্পানির সন্ধান দিতে পারেন, যেটি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাহলে কালই আমি সেটি কিনে নেব।’ চলতি বছরের মে মাসে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভায় তিনি মোবাইল পেমেন্ট সেবায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক কোম্পানিই এখন এদিকে ঝুঁকছে।

বাফেট ওরাকল অব ওমাহা নামেও পরিচিত। তিনি ভারতে বিনিয়োগ করলে মানুষ নড়েচড়ে বসবে এবং তাতে নজর দেবে। পেটিএমে শুধু বার্কশায়ার হাথওয়েই নয়, বৃহৎ চীনা কোম্পানি আলিবাবা ও জাপানি প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংকও বিনিয়োগ করেছে।

ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক বিদ্যানাথন কৃষ্ণমূর্তি বলেন, ‘বিনিয়োগকারী হিসেবে বাফেট মৌলিক প্রকৃতির, তাঁর অধিকাংশ বিনিয়োগের মেয়াদ অন্তত এক দশক। পেটিএমেও যে তিনি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করবেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই।