দরিদ্রদের জন্য ঘর, সঙ্গে চাকরি

দরিদ্রদের জন্য নির্মিতব্য আবাসনের নকশা। ছবি: বেজার সৌজন্যে
দরিদ্রদের জন্য নির্মিতব্য আবাসনের নকশা। ছবি: বেজার সৌজন্যে

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে আন্তর্জাতিক মানের ইকো-ট্যুরিজম পার্ক বা পর্যটনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের ঘর বানিয়ে দেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজন করে সদস্যের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে।

বেজা এ সহায়তা দেবে আইন অনুযায়ী প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের বাইরে। এ দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মালিকেরা তাঁদের জমির বিপরীতে দুই অথবা তিন গুণ মূল্য পাচ্ছেন। আর যাঁদের জমি ছিল না, সরকারি অথবা খাসজমিতে বসবাস করছিলেন, তাঁদের জন্যই মূলত ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে বেজা। এ জন্য ২৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সোনাদিয়ায় পুনর্বাসনে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও মিরসরাইয়ে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ টাকা বেজা সরকারের পুনর্বাসন তহবিল অথবা নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে।

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে দেশের সমৃদ্ধি ও মানুষের কল্যাণের জন্য। এটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তার আওতায় দরিদ্রদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত এলাকায় বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করবে বেজা। যাঁরা আইনত কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না, তাঁদের জন্যই এ ব্যবস্থা।

পবন চৌধুরী আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানাভাবে উপকৃত হবে। প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেখানে কাজ দেওয়া হবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর আকার হবে প্রায় ৩০ হাজার একর। বেজার তথ্য অনুযায়ী, মিরসরাই ও ফেনীতে বেজার মালিকানায় এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৪৮ একর জমি এসেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগই সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া। অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৩০ একর জমি। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকেরা সরকারের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, নতুন আইনে ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে জমির মূল্যের তিনগুণ। তবে নতুন আইন হওয়ার আগে যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে মূল্যের দ্বিগুণ।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইকো ট্যুরিজম পার্ক বা পর্যটনকেন্দ্র করছে বেজা। এ জন্য তাদের ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ দ্বীপে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নেই। ফলে অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রায় ২৬ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা দামের এই জমি মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সালামিতে বেজাকে দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।

সোনাদিয়া দ্বীপে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি না থাকলেও সেখানে সরকারের জমিতে ৩১৬টি পরিবার বসবাস করে। তাঁদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে বেজা। পাশাপাশি মিরসরাইয়ে (সাব জোন ৭, ৮ ও ৯) ২০২টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় বরাদ্দ করেছে বেজা। এ নিয়ে বেজার তৈরি করা এক নথি অনুযায়ী, প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৫ শতাংশ করে জমি পাবে। জমিতে ইটের দেয়াল ও ইস্পাতের কাঠামোয় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। প্রতি ঘরে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর, খাবার জায়গা ও পাকা পায়খানা থাকবে। পুনর্বাসনকেন্দ্রে সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হবে। এ ছাড়া প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি করে নলকূপ ও প্রতি পুনর্বাসনকেন্দ্রে দুটি করে পুকুর খনন করে দেবে বেজা।

সরকার আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ৮২টির অনুমোদন মিলেছে, যার ৫৪টি সরকারি। বাকি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে পুনর্বাসন পরিকল্পনা কী হবে, জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আইন অনুযায়ী জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এর বাইরে দরিদ্র কেউ থাকলে একইভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।