সালামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ

আবদুস সালাম জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতের ভিত্তিতে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর অবসরে যান আবদুস সালাম। বর্তমানে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের উপদেষ্টা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক তাঁকে এমডি বানাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত মাসে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। জানা গেছে, তাঁর মেয়াদে জনতা ব্যাংকে বিভিন্ন অনিয়ম হওয়ার কারণেই তা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দুটি ব্যাংকই চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির কথা জানিয়ে গত রাতে আবদুস সালামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শাখার নিজস্ব ক্ষমতায় ক্রিসেন্ট সুবিধা পেয়েছে, আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি।’

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে রপ্তানি বিল ক্রয় ও মূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকার বিষয়ে ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুস সালামের কর্তব্যে অবহেলা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের অভাব প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতের ভিত্তিতে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের আলোকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তাঁর ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা গত ২ আগস্ট ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ব্যাংকের সাবেক এমডি ও একাধিক ডিএমডির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অর্থ মন্ত্রণালয় এ চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। লুনা শামসুদ্দোহাকে গতকাল ফোনে পাওয়া যায়নি।

জনতা ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বলছে, জনতা ব্যাংক থেকে নতুন নতুন কৌশলে ক্রিসেন্ট গ্রুপ টাকা বের করেছে। এ ক্ষেত্রে জনতা ব্যাংক শুধু নিজে টাকা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বের করারও সুযোগ করে দেয়। আর ব্যাংক নিজে দেয় ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ফলে এ গ্রুপ সরকারি ব্যাংক ও সরকারের তহবিল থেকে সব মিলিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আবার রপ্তানির টাকা বিদেশে আটকা ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

জানা যাচ্ছে, গ্রাহক তিনভাবে এর সুবিধা ভোগ করেছেন। রপ্তানি বিলের টাকা বিদেশে রেখেছেন, সেই বিল ব্যাংককে দিয়ে ক্রয় করিয়ে টাকা নিয়েছেন, আবার এসব রপ্তানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তাও নিয়েছেন।

জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক বলতে এ ক্রিসেন্ট গ্রুপই। শাখার ঋণের ৯৮ শতাংশই এ গ্রুপের কাছে আটকে রয়েছে, যার প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি। কাগজে-কলমে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্ণধার এম এ কাদের। গ্রুপটি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি দেখিয়েছে হংকং ও থাইল্যান্ডে। এসব দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বাংলাদেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সরকার থেকে নেওয়া নগদ সহায়তার টাকা দুবাইয়ে পাচার করেছে গ্রুপটি। এখন সেই টাকার কিছু অংশ রপ্তানি বিল হিসেবে দেশে আনছে। গ্রুপটির কাছ থেকে বিল ক্রয় বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিলেও তা পালন করেনি জনতা ব্যাংক। এ ঘটনা উচ্চপর্যায়ে জানাজানি হলে জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ফখরুল আলমকে গত ১২ জুন কৃষি ব্যাংকে বদলি করে অর্থ মন্ত্রণালয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জনতা ব্যাংকের নতুন এমডি হিসেবে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর দায়িত্ব নেন আবদুছ ছালাম আজাদ। এরপর পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজনের চাপে মানবসম্পদসহ রপ্তানি বিলের দায়িত্ব নেন ফখরুল আলম। এ সুবাদে নিজের লোককে ওই শাখার ব্যবস্থাপক করে বিল ক্রয়ে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে ফখরুল আলম কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেন, পর্ষদ ও এমডির নির্দেশেই সব হয়েছে।

আরও পড়ুন...