আগস্টে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে

এ বছর আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মাসওয়ারি ভিত্তিতে এ মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর গত জুলাইয়ে এই হার ছিল ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচ্য মাসের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে পরিকল্পনা কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ চিত্রটি সহজে ব্যাখ্যা করে বলা যায়, ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে একজন ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা নিতে ১০০ টাকা খরচ করেছেন। এ বছরের একই সময়ে সেই একই সেবা বা পণ্য কিনতে ১০৬ টাকা ৯১ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ওই ব্যক্তিকে ৬ টাকা ৯১ পয়সা বেশি খরচ করতে হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মনে করেন, উত্তরাঞ্চলের চলমান বন্যা প্রলম্বিত হলে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মত দেন।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এ মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আর জুলাইয়ে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে জুলাইয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। পরের মাসে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশে।
বিভিন্ন পণ্যের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিবিএস বলছে, চাল, মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি, ফল, মসলা, দুধসহ নিত্যপণ্যের দাম জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে বাড়িভাড়া, আসবাব ও গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণের মতো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও আধা শতাংশ বেড়েছে।
গ্রামের চেয়ে শহরে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। গ্রামের মানুষ যে দামে সেবা বা পণ্য কিনতে পারেন, সেই একই পণ্য বা সেবা নিতে শহরের মানুষকে অপেক্ষাকৃত বেশি খরচ করতে হয়। সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি লক্ষ করলে দেখা যায়, শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। শহরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর গ্রামে এ হার ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
কেন মূল্যস্ফীতি কমেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খাবার কিনতেই মানুষ আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করে থাকে। খাদ্যপণ্যের অর্ধেকের বেশি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অনেক কমেছে। তাই স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়েনি। এ কারণেই মূলত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি মাসওয়ারি ভিত্তিতে মজুরি বৃদ্ধির হারও প্রকাশ করে থাকে বিবিএস। সেখানে মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা কেমন— সেটা দেখানো হয়। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় জাতীয় মজুরি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। তবে এটি কোনো একজন শ্রমিকের মজুরির বৃদ্ধির হার নয়। সারা দেশে যত শ্রমিক রয়েছে, তাদের সবার গড় মজুরি বৃদ্ধির হার।