টিকফায় বাংলাদেশের চাওয়া অস্পষ্ট!

>ওয়াশিংটনে আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া টিকফা বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে গেছে।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশ শ্রমিকবান্ধব আইন ও মেধাস্বত্ব অধিকার নিশ্চিত করুক। বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ পরিবেশেরও উন্নয়ন হোক, সেটিও চায় তারা।

পারস্পরিক এই চাওয়া-চাওয়ির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম (টিকফা) কাউন্সিলের চতুর্থ বৈঠক আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে। এর আগে গত চার বছরে ঢাকায় টিকফা কাউন্সিলের দুটি এবং ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসুর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র গেছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন শ্রমসচিব আফরোজা খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী, পরিচালক জিয়াউল হক ও উপপরিচালক খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচ্যসূচি দেখে যতটুকু বোঝা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়াটা সুনির্দিষ্ট এবং যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে ও আটঘাট বেঁধে নেমেছে দেশটি। আর বাংলাদেশের চাওয়া অস্পষ্ট। পণ্যের ন্যায্যমূল্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিবর্তে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।’

পাঁচটি করে আলোচ্যসূচি

বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যপত্র বলছে, দুই দেশেরই আলোচ্যসূচি পাঁচটি করে। বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কি না বা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কি না। হয়ে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চতুর্থ টিকফা কাউন্সিলে কী চাওয়া যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইন বা নীতি দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে কোনো বাধা তৈরি করছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।

ওয়াশিংটন বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের আলোচ্যসূচি ঠিক করা হয় পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশি পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও নৈতিক কেনাবেচার চর্চা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাণিজ্যবিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি (টিএফএ) বাস্তবায়ন পদ্ধতি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ আলোচ্যসূচি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাজার প্রবেশাধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ, সরকারি ক্রয় এবং শ্রম অধিকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার প্রবেশাধিকারের ইস্যুতে আরও চারটি বিষয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বিমা, তুলা, ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস এবং ডিজিটাল অর্থনীতি।

যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়েও কয়েকটি ইস্যু স্থান পেয়েছে। যেমন ই-বর্জ্য, ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস আইন, টিএফএ বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং মেধাস্বত্ব অধিকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিষয় বেশি।

জিএসপির আলোচনা এবারও নয়

কিছু পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) দিত যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৩ সালের জুনে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তখন ছিল বারাক ওবামা প্রশাসন। নতুন সরকার অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরও বাংলাদেশের জন্য ওই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এক বছর ধরেই জিএসপি নিয়ে বাংলাদেশ আর উচ্চকণ্ঠ নয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এবারের আলোচ্যসূচিতে জিএসপি নেই, এমনকি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও এ বিষয় তোলা হবে না। তবে সেবা খাত থেকে বাংলাদেশি সেবিকা (নার্স) ও মিডওয়াইফরা যাতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাজ করতে পারেন, সে জন্য নিয়মকানুন সহজ ও শিথিল করার বিষয়ে আবারও প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকে তা দেয় না। অথচ আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের (আগোয়া) আওতায় আফ্রিকার কিছু দেশকে ঠিকই শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয় দেশটি। জানা গেছে, জিএসপির বদলে বাংলাদেশ এবার জোর দেবে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকারের বিষয়ে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘জিএসপি পাওয়ার আশা বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই চাপ দিতে পারছে, কিন্তু অধিকারের জায়গাগুলো নিয়ে আমরা জোরেশোরে কিছু বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে হতাশ লাগে।’