সংকটকালে চীনের উত্থান

>
চীনের অর্থনীতি এশিয়ার প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: রয়টার্স
চীনের অর্থনীতি এশিয়ার প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: রয়টার্স

১০ বছর আগের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে যেমন শেয়ারবাজারে ধস নামে, তেমনি অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়। অনেক দেশ এখনো তার জের কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সংকট-পরবর্তী ১০ বছর কেমন ছিল, তা খতিয়ে দেখতে বিবিসি একটি গবেষণা করিয়েছে। সেই গবেষণার আলোকে একটি প্রতিবেদন পাঠকদের জন্য প্রকাশ হলো।

এশিয়ার তরুণদের কাছে পশ্চিমা বিশ্বে গিয়ে পড়াশোনা ও কাজ করা রীতিমতো স্বপ্নের মতো। কিন্তু সিঙ্গাপুরের তরুণ ডেক্লান ইর জীবনে পশ্চিমে যাওয়াটা দুঃস্বপ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে এর জন্য তিনি নিজে দায়ী নন।

সে সময় তিনি লন্ডনে লেহম্যান ব্রাদার্সের সাব-প্রাইম মর্টগেজ বিভাগে কনিষ্ঠ ব্যাংকার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর ক্যারিয়ার যে পথে এগোচ্ছিল, তাতে তাঁর অভীষ্ট অর্জনে সফল হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র। তিনিও তেমনটাই ভেবেছিলেন।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর আমি কখনোই নিরাপদ বোধ করিনি। আমি তখন ব্যাংক খাতের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছিলাম।’ লেহম্যান ব্রাদার্স ধসে পড়লে যে হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারান, ডেকলান তাঁদের মধ্যে একজন। অনেকেই বলে থাকেন, এর মধ্য দিয়েই আর্থিক সংকট শুরু হয়। সে সময় লেহম্যান ব্রাদার্সের ঋণ রাতারাতি উবে যায়। একই সঙ্গে মানুষের চাকরি চলে যায় এবং ব্যাংকও শত শত কোটি ডলার হারিয়ে বসে। উন্নত বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে যায়। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে তাদের এক দশক লেগে যায়। তবে অনেক অর্থনীতিবিদই বলবেন, উন্নত বিশ্ব এখনো এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

এশিয়াও আক্রান্ত হয়েছে

এই সংকট বিশ্ব অর্থনীতির মর্মমূলে আঘাত করে। এটি মূলত উন্নত বিশ্বের সংকট হলেও এশীয় অর্থনীতি এর বাইরে ছিল না, তার গায়েও আঁচ লেগেছিল। তবে এশিয়া-ইউরোপের মতো অতটা আক্রান্ত হয়নি।

আজ থেকে ১০ বছর আগে এশীয় ব্যাংকগুলোর কর্মীরাও চাকরি হারিয়েছেন। সেখানে যেমন কর্মীদের মজুরি স্থবির হয়ে গিয়েছিল, তেমনি ব্যাংকের খরচও কমাতে হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক ডিবিএসও আক্রান্ত হয়। তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ঋণ অবলোপন করতে বাধ্য হয়েছে। তবে এশীয় ও চীনা অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তির কারণে এই মহাদেশ দ্রুতই সংকট কাটিয়ে ওঠে।

ডিবিএস ব্যাংকের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তেরেন্স ইয়ং ইউ তিয়েক বলেন, মূলত এশিয়ায় বৃহৎ পরিসরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গাড়ি, বিমান সংস্থা, ভোগ্যপণ্য, পণ্য বা সেবা—যে খাতের কথাই বলা হোক না কেন, এদের চাহিদা বাড়ার কারণ হলো এশিয়ার মধ্য আয়ের প্রবৃদ্ধি। চীনও ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। সে কারণে এশিয়ায় মানুষের চাহিদা বাড়ছিল। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে এশীয় কোম্পানিগুলোকেও কৌশল বদলাতে হয়েছে।

চীনের উত্থান

২০০৭ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। ২০০৮ সালে লেহম্যান ব্রাদার্সের পতনের পর ২০০৯ সালে তা ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, এরপর চীন সরকার ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে। এতে শুধু যে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয় বা চীনের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হয় তা নয়, তা এশিয়ারও প্রাণ হয়ে দাঁড়ায়।