যুক্তরাজ্যের মানুষ আরও গরিব হয়েছে

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙেছে। তবে তা ভালো রেকর্ড নয়। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙেছে। তবে তা ভালো রেকর্ড নয়। ছবি: রয়টার্স

২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর গত এক দশকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে গবেষণা করিয়েছে বিবিসি। গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক সংকটের প্রভাবে যুক্তরাজ্যের মানুষের মজুরি এক দশক আগের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে গেছে।

বিবিসির জন্য গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজ (আইএফএস)। এতে দেখা যায়, গড়ে মানুষের বার্ষিক প্রকৃত মজুরি এক দশকের আগের তুলনায় অন্তত ৮০০ পাউন্ড কমেছে। সে কারণে বিশ্লেষকেরা একে হারানো দশক আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এই দশকে মানুষের অবস্থার অবনতি হয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে যে ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী লোকজন এখন ২০০৮ সালে একই বয়সী মানুষের চেয়ে বছরে ২ হাজার ১০০ পাউন্ড কম আয় করছেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মানুষের আয় কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০-৩০ বছর বয়সী মানুষের আয় কমেছে ৫ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব কর্মক্ষম মানুষের আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের সময় মানুষের গড় বার্ষিক আয় ছিল ২৪ হাজার ১০০ পাউন্ড। ২০১৭ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩০০ পাউন্ডে।

আইএফএসের পরিচালক পল জনসন বলেন, ‘মন্দার পর ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের আয় দ্রুত কমেছে। সম্ভবত এর কারণ হলো, নিয়োগদাতারা নবীনদের প্রারম্ভিক বেতন কমাতে পারলেও যাঁরা তখন কর্মরত ছিলেন, তাঁদের বেতন কমাতে পারেননি। নবীনদের আয় সম্প্রতি বাড়লেও তা প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো নয়।’

পল জনসন আরও বলেন, ‘পেনশনভোগী মানুষেরা গড়ে তরুণদের চেয়ে ভালো আছেন। অংশত এ কারণে যে তাঁরা তরুণদের মতো অতটা আয়ের ওপর নির্ভরশীল নন। সে কারণে আয় কমার প্রভাব তাঁদের জীবনে অতটা পড়েনি। সরকারও পেনশনভোগীদের পেনশন ও অন্যান্য সুবিধায় হাত দিতে চায়নি।’

আইএফসের এই গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে দেখানো হয়েছে, ১৯৯৮-২০০৮ সাল পর্যন্ত মানুষের আয় যে হারে বেড়েছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে এখন ব্রিটিশদের বার্ষিক আয় দাঁড়াত ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ড, মানুষের বর্তমান গড় আয়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।

পল জনসন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙেছে, তবে স্বাভাবিকভাবে তা ভালো রেকর্ড গড়েনি: রেকর্ড পরিমাণ নিম্ন আয়, রেকর্ড নিম্ন সুদের হার, সরকারের রেকর্ড পরিমাণ ঋণ, সরকারি ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস ইত্যাদি।’

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্যে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। তবে ব্যাপারটা যেমনই লাগুক না কেন, বাস্তবে ধনী ও গরিবের ব্যবধান কিছুটা কমেছে। কিন্তু তরুণ ও বৃদ্ধদের মধ্যকার ব্যবধান বেড়েই চলেছে।’

সংকটের পর লন্ডন ও ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাড়ির দাম রকেটের গতিতে বেড়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়কারীদের জীবনে একরকম বিপর্যয় নেমে এসেছে। একসময় আমানতের সুদের হার ৫ শতাংশের বেশি থাকলেও এখন তা ভগ্নাংশে নেমে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া এক দশকে যুক্তরাজ্যের গৃহপ্রতি ঋণ ৩ হাজার থেকে বেড়ে ৪ হাজার পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে।

আইএফএস বলেছে, এক দশক আগের আর্থিক সংকট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তরকালের সবচেয়ে গভীর সংকটের জন্ম দিয়েছে। এর প্রভাব এত দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে যে সে কারণেই তা উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ঐতিহাসিক মানদণ্ডে এখনো অনেক কম। এ সময়ে সরকারের ঋণ বেড়েছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারি ব্যয় অভূতপূর্ব হারে কমানো হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবদনে বলা হয়েছে, কিছু কাঠামোগত বিষয় এখনো অনিস্পন্ন রয়ে গেছে। যেমন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক ভূমিকা কী হবে এবং তাতে শিল্প উৎপাদন নীতি কীভাবে সহায়ক হবে-এসব বিষয় ফয়সালা করতে হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক নেতৃত্বকে ভাবতে হবে, বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম পরিবর্তন করে কীভাবে এটা নিশ্চিত করা যায় যে কেউ উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বে না।