উদ্ভাবনে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

  • গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০১৮-এর প্রতিবেদন
  • প্রতিবেদনে জ্বালানি খাতে আগামী এক দশকে উদ্ভাবনের রূপরেখা
  • বাংলাদেশের সঙ্গে কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানের নাম
  • তবে সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য ভালো খবর আছে
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উদ্ভাবনের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে

এশিয়া মহাদেশে উদ্ভাবনের দিক থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, আর সবার আগে আছে সিঙ্গাপুর। সবচেয়ে কম উদ্ভাবনী দেশের কাতারে আছে বাংলাদেশ, কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তান। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০১৮-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দেশগুলো ভবিষ্যতে নানা ধরনের উদ্ভাবন থেকে লাভবান হবে।

প্রতিবেদনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে পৃথিবীতে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এই চাহিদা মেটানোর জন্য প্রযুক্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের উদ্ভাবন দরকার। সেটা যেমন জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে, তেমনি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। বলা হয়েছে, এই চাহিদা ও সরবরাহের সমীকরণ মেলানোর ক্ষেত্রে উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এ-ও বলা হয়েছে যে শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। উদ্ভাবনের সঙ্গে সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

জুলাইয়ে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে জ্বালানি খাতে আগামী এক দশকে উদ্ভাবনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ ও ভোগের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেসব যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে, প্রতিবেদনে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া তৃণমূলে কীভাবে উদ্ভাবন হয় এবং ক্ষুদ্র পরিসরে নবায়নযোগ্য ব্যবস্থার কীভাবে উত্থান ঘটছে, প্রতিবেদনে তা-ও দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পেছনের সারিতে থাকলেও সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য ভালো খবর আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উদ্ভাবনের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে আছে। অধিকাংশ সূচকে সিঙ্গাপুর ভালো অবস্থানে আছে। গত বছরের তুলনায় বৈশ্বিক তালিকায় তারা দুই ধাপ ওপরের দিকে উঠেছে।

দক্ষিণ কোরিয়াও এ ক্ষেত্রে ভালো করেছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলো সাধারণত উদ্ভাবনের জন্য যথেষ্ট ব্যয় করে থাকে, দক্ষিণ কোরিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। তারা শুধু বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, তা নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়নের সূচকে তারা যথেষ্ট ভালো করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পেছনে আছে জাপান, এশিয়ায় যাদের অবস্থান তৃতীয়।

এশিয়ায় চতুর্থ স্থানে আছে চীন। দেশটি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে খুবই ভালো জায়গায় আছে। উদ্ভাবনের দিক থেকে তারা যে এগিয়ে গেছে, তার প্রমাণ দেশটির গবেষণা ও উন্নয়ন কোম্পানিগুলোর বাড়বাড়ন্ত হওয়া। এ ছাড়া হাইটেক কোম্পানি, প্রকাশনার মান ও উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে তারা উদ্ভাবনী শক্তির প্রমাণ রেখেছে।

চীনের পর আছে মালয়েশিয়া। মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ উদ্ভাবনে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি, জ্ঞান বিতরণ ও সৃজনশীল পণ্য ও সেবার উদ্ভাবনের কল্যাণে এ বছর তারা উন্নতি ঘটিয়েছে।

এশিয়ায় ষষ্ঠ স্থানে আছে থাইল্যান্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন সাপেক্ষে উদ্ভাবনে তারা বেশি অগ্রগতি অর্জনে করেছে। অর্থাৎ তাদের উদ্ভাবনের গতি উন্নয়নকে ছাপিয়ে গেছে। এরপর সপ্তম ও অষ্টম স্থানে আছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম ও মঙ্গোলিয়া। ভারতের স্থান ৯ নম্বরে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে তার মিল এ জায়গায় যে তার উদ্ভাবনের গতি উন্নয়নের গতিকে পেরিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে এগিয়েছে, তাদের মধ্যে ভারত অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রুনেইয়ের আয় অনেক বেশি হলেও উদ্ভাবনের নিরিখে তারা পিছিয়ে। এশিয়ায় তার অবস্থান ১০ নম্বরে। তার পরে আছে ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া। আর এশিয়ার সবচেয়ে কম উদ্ভাবনী দেশগুলো হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান সুরক্ষাবাদ সামাল দেওয়া গেলে এশিয়ায় উদ্ভাবনের মাত্রা আরও বাড়বে। বিশেষ করে যদি প্রযুক্তি সংবেদনশীল খাত, আইপি ও জ্ঞানের প্রবাহ-এসব ক্ষেত্রে সুরক্ষাবাদের রাশ টেনে ধরা যায়, তাহলে ভারত উদ্ভাবনে অনেক এগিয়ে যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদনশীল জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণের মাধ্যমে সমাজ উপকৃত হতে পারে। এ ছাড়া সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন জ্ঞান উৎপাদন ও উদ্ভাবনের অর্গল খুলে দেওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক মন্তব্যে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, ভারত ক্রমশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে এগোচ্ছে। সম্প্রতি সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও এলইডি প্রযুক্তির বাতি ব্যবহার করে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ওয়াট ব্যবহার কমানো গেছে, তেমনি মানুষের জন্য রাতের বেলা উন্নত মানের আলোর সংস্থান করা গেছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়, আরও অনেক কিছু করতে হবে। সে কারণে এ বছরের গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সের যে মূল বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ ‘উদ্ভাবনের মাধ্যমে পৃথিবীকে উদ্যমী করে তোলা’, তা ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই যথাযথ। তিনি মনে করেন, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর উদ্ভাবনী হওয়া ছাড়া উপায় নেই।