খাতায় হিসাব রাখার দিন শেষ

>

সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য
* সফটওয়্যার থেকে একবারই মূসক চালান নেওয়া যাবে
* বেচাকেনার কোনো তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব হিসাবে আপডেট হবে
* ভ্যাট কর্মকর্তারা যখন-তখন সফটওয়্যারে ঢুকতে পারবেন

খাতা-কলমে বেচাকেনার হিসাব রাখার দিন শেষ। এখন থেকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ক্রেতাকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট চালান দিতে হবে। আবার কত টাকার পণ্য বিক্রি করলেন, সেই হিসাবও রাখতে হবে বিক্রেতাকে।

বছরে পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেচাকেনার সব হিসাব রাখতে হবে। এমনকি মূসক বা ভ্যাট চালানও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দিতে হবে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার ব্যবসায়ীদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সম্প্রতি এনবিআর এ–সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। এতে আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব না রাখলে বিক্রেতাদের জন্য শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পুরোনো মূসক আইনের আওতায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য কী হবে, সেটাও ঠিক করে দিয়েছে এনবিআর।

তবে বার্ষিক লেনদেন পাঁচ কোটি টাকার কম হলেও কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে পারেন।

যদিও এর ছয় মাস পরেই অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। তখন কোন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, সেই দিকনির্দেশনা অবশ্য দেয়নি এনবিআর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এটি বেশ ভালো উদ্যোগ। তবে দেখতে হবে, এই সফটওয়্যার ব্যবহারের সক্ষমতা ব্যবসায়ীদের কতটা আছে। কেননা, বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার লেনদেনের সীমা থাকায় অনেক ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এর আওতায় পড়ে যাবেন। এখন এনবিআর কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করে, সেটাই দেখার বিষয়।

আবুল কাশেম খান আরও বলেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সব হিসাব রাখা ও জমা দেওয়া হলে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসে। তবে পদ্ধতিটা ব্যবহার করতে জানলে এটি খুব সহজ হবে। এ জন্য এনবিআরকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রচারণা চালাতে হবে।

সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য

সফটওয়্যারটিতে পণ্য কেনার হিসাব রেজিস্টার ও বিক্রয় চালানের কোনো তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ধরনের হিসাবে আপডেট হয়ে যাবে। এই সফটওয়্যারে বিভিন্ন মূসক হার, ট্যারিফ মূল্যসহ নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। প্রতি মাসে এনবিআরে দাখিলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক হিসাবপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত ও প্রিন্ট নেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সফটওয়্যার থেকে শুধু একবারই মূল মূসক চালানপত্র প্রিন্ট করা যাবে। কোনো কাটছাঁট ও পুনরায় প্রিন্ট নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। মূসক চালানপত্রে সময় ও তারিখ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাপা থাকতে হবে। এর ফলে মূসক চালান নকল করার সুযোগ থাকবে না। তবে মূল মূসক চালানের অনুলিপি প্রিন্ট করা যাবে, যেখানে জলছাপে অনুলিপি লেখা থাকতে হবে।

প্রতিদিন যত বেচাকেনা হবে অর্থাৎ দিনের কার্যক্রম কম্পিউটার জেনারেটেড রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন চালানপত্র, ডেবিট বা ক্রেডিট নোট, পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় রেজিস্টার, চলতি হিসাব, দাখিলপত্র ইত্যাদি। এসব প্রিন্ট করে প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ সংরক্ষণ করতে হবে। এর পাশাপাশি হিসাবরক্ষণসংক্রান্ত সব দলিল বাঁধাই করে ছয় বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য প্রতিদিনের কার্যক্রমের দলিলপত্র কমপক্ষে দুটি ব্যাকআপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলেও ডেটা বা তথ্য–উপাত্ত নষ্ট না হয়।

কেউ যদি পণ্য ফেরত দেয় কিংবা ক্রয় আদেশ বাতিল করে, তা–ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে।

কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সফটওয়্যার সন্নিবেশিত করলেও তাতে মূসক কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অ্যাকসেস বা প্রবেশাধিকার সুবিধা থাকতে হবে। ফলে মূসক কর্মকর্তারা চাইলে সফটওয়্যারে ঢুকে যেকোনো বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন।

দেশের ভ্যাট ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্যে নতুন ভ্যাট আইন করা হয়। নতুন আইনে ভ্যাটের হিসাব রাখা, রিটার্ন দাখিলসহ সবকিছুই অনলাইনে সম্পন্ন করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। গত ২০১২ সালে ভ্যাট আইন হলেও প্রস্তুতির জন্য সময় নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তা দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এখন ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নের কথা আছে।

কিন্তু এনবিআর ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থাটি স্বয়ংক্রিয় করার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। পুরোনো আইনের আওতায় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সফটওয়্যার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ভ্যাট কার্যক্রম চালু করতে হলে একদিকে ব্যবসায়ীদের নিজেদের হিসাবও স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাখতে হবে। আবার রিটার্ন জমাসহ এনবিআরের সঙ্গে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যবসায়ীদের ইলেকট্রনিক ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (ইবিআইএন) লাগবে।