২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলাতে চাইলে ব্যয় হবে ২৫৮ টাকা

দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা আগামী সোমবার থেকে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল করতে পারবেন। তাঁদের এই সুযোগ দিতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি সেবা। এর মাধ্যমে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের গ্রাহকেরা একে অন্যের নেটওয়ার্কে গিয়ে তাদের কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারবেন, কিন্তু নম্বর থাকবে আগেরটাই।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মঙ্গলবার মোবাইল অপারেটরগুলোকে চিঠি দিয়ে এমএনপি সেবা চালুর দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে। এমএনপি সেবার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক-বিডি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ সেবা চালু হবে। ১ অক্টোবর, অর্থাৎ সোমবার থেকে কোনো গ্রাহক অপারেটর বদল করতে চাইলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের (যেটায় যেতে আগ্রহী) কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে নতুন একটি সিম (নম্বর আগেরটাই) নিতে হবে। এই সিম পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চালু হবে।

এদিকে সেবাটি চালুর আগেই গ্রাহকের মাশুল বা ফি বাড়িয়ে দিয়েছে বিটিআরসি। প্রতিবার নম্বর বদলাতে গ্রাহককে ফি হিসেবে ৫০ টাকা দিতে হবে, যা এত দিন ৩০ টাকার কথা বলা হয়েছিল। অবশ্য একবার অপারেটর বদলাতে সব মিলিয়ে গ্রাহকের ব্যয় হবে ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে এমএনপি সেবার ফি ৫০ টাকা ও তার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাবদ সাড়ে ৭ টাকা এবং সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্টের বিপরীতে কর ১০০ টাকা।

অপারেটররা বলছে, প্রতিবার অপারেটর বদলাতে নতুন সিম নিতে হবে। এ জন্য কর গ্রাহককেই দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপারেটর বদলাতে চাইলে ব্যয় হবে ২৫৮ টাকা। কারণ, দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য ইনফোজিলিয়ন ১০০ টাকা বাড়তি নেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে।
একবার অপারেটর পরিবর্তন করে অন্য অপারেটরে গেলে ৯০ দিন সেখানে থাকতে হবে। অর্থাৎ, অপারেটর পরিবর্তন করার পর যদি মনে হয় নতুন অপারেটরের সেবা ভালো নয়, তারপরও গ্রাহক নির্দিষ্ট সময়ের আগে অপারেটর বদলাতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসি যে শর্ত ও ফি ধার্য করে এমএনপি সেবা চালু করছে, তাতে এটি গ্রাহকের কাছে খুব আকর্ষণীয় হওয়ার সম্ভাবনা কম। মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান, কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় কোনো পার্থক্য নেই। অবশ্য এমএনপির সফলতা নির্ভর করছে গ্রাহক টানতে অপারেটররা নতুন নতুন প্যাকেজ চালু করে কি না, তার ওপর।

জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান প্রথম আলোকে বলেন, কম দাম অথবা ভালো মানের সেবার জন্য মানুষ অপারেটর বদলায়। এ দেশে কার্যকর তিন অপারেটরের মধ্যে তেমন প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। আর ভালো মানের সেবা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অপারেটর—দুই পক্ষের মধ্যেই কোনো উদ্বেগ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘এমএনপির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না।’
খুব বেশি আশাবাদী নয় দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল অপারেটর রবিও। প্রতিষ্ঠানটির গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমএনপি নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। তবে এ সেবা নিতে একজন গ্রাহকের জন্য যে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে এমএনপির আশানুরূপ ফলাফল নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

এদিকে ইনফোজিলিয়ন ও অপারেটররা জানিয়েছে, এমএনপি চালুর সব প্রস্তুতি শেষ। জানতে চাইলে শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘গ্রাহককে আমাদের নেটওয়ার্কে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত।’

মাশুল বাড়ল

বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার জোট বা কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন গত নভেম্বরে এমএনপি সেবার লাইসেন্স পায়। এর আগে জুলাই মাসে এমএনপি নীতিমালা বা গাইডলাইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন অপারেটর পরিবর্তনে সেবাদানকারীর ফি ৩০ টাকা ধরা হয়েছিল। এখন চালুর আগে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এ অর্থের ভাগ বিটিআরসিও পাবে।

জানতে চাইলে ইনফোজিলিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ টাকা ফি ধরা হয়েছিল তিন-চার বছর আগে। এখনকার সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিটিআরসি তা ৫০ টাকা করেছে।’