অপারেটর বদলে 'খাজনা' বেশি

>
  • সরকার-নির্ধারিত ব্যয় ১৫৮ টাকা, যার মধ্যে ১০৮ টাকাই সিম-কর ও ভ্যাট।
  • অবশ্য গ্রাহকের খরচ কমাতে কিছুটা ভর্তুকি দিচ্ছে অপারেটররা।
  •  ভবিষ্যতে খরচ পুনর্বিবেচনা করা হবে।
  •  পুরোনো সিমের টাকা ও ডেটা নতুন অপারেটরে যোগ হবে না।
  • ধারের টাকা ও পোস্ট-পেইডের বকেয়া বিল পরিশোধ আগে।
  • ভারতে অপারেটর বদলাতে গ্রাহকের খরচ হয় মাত্র ৪ রুপি।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা। গ্রাহকেরা যাতে নম্বর ঠিক রেখে অন্য অপারেটরে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে এ সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। যদিও অপারেটর বদলে যে ব্যয় ও শর্ত রাখা হয়েছে, তা সাধারণ গ্রাহকের জন্য কঠিন হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিটিআরসি গত রোববার মধ্যরাত থেকে এমএনপি সেবা চালু করে। গ্রাহকেরা অপারেটর বদলের সেবা পাওয়া শুরু করেন গতকাল সোমবার থেকে। প্রথম দিন কতজন এ সেবা নিয়েছে, তা বিটিআরসির কাছ থেকে জানতে বলেছে এমএনপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক-বিডি। তবে বিটিআরসি তাৎক্ষণিকভাবে এ হিসাব জানাতে পারেনি।

এমএনপি সেবা চালুর বিষয়ে জানাতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিটিআরসি। রাজধানীর রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, তাঁরা সেবাটিকে আপাতত পরীক্ষামূলক বলছেন। তবে গ্রাহকেরা অপারেটর বদল করতে পারবেন। তিনি বলেন, অপারেটর বদলের সেবা চালুর মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষণে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে তারা গুণগত সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবে।

জহুরুল হক আরও বলেন, একবার অপারেটর বদল করতে একজন গ্রাহককে ১৫৮ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে এমএনপি ফি বা মাশুল ৫০ টাকা, মাশুলের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাবদ সাড়ে ৭ টাকা এবং সিম পরিবর্তনের জন্য কর রয়েছে ১০০ টাকা। অর্থাৎ খরচের বড় অংশই কর বাবদ নেওয়া হচ্ছে।

ফলে একজন গ্রাহক একবার অপারেটর বদল করলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৮ টাকা পাবে কর হিসেবে। আর এমএনপি সেবাদাতা পাবে ৫০ টাকা, যার একটি ভাগ পাবে বিটিআরসি। অবশ্য গ্রাহকের মোট ব্যয়ের ওপর কিছু কিছু ভর্তুকি দিচ্ছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা। তারা জানিয়েছে, গ্রাহক টানতে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

জানা গেছে, সরকার ও এমএনপি সেবাদাতাকে ১৫৮ টাকা দেওয়ার জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে গ্রামীণফোন ১৫৫ টাকা, রবি আজিয়াটা ১৪৯ টাকা ও বাংলালিংক ১০০ টাকা নিচ্ছে। বাকিটা তারা নিজেরা দিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য এর বাইরেও গ্রাহক নিতে অপারেটরগুলোকেও ১০০ টাকা করে মাশুল দিতে হবে এমএনপি সেবাদাতাকে। টেলিটক তিন মাস গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেবে না বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির রেগুলেটরি বিভাগের প্রধান সাইফুর রহমান।

জুলাই মাসে এমএনপি নীতিমালা চূড়ান্ত করার সময় বলা হয়েছিল অপারেটর পরিবর্তনে গ্রাহকের মাশুল হবে ৩০ টাকা। অবশ্য চালুর আগে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে বিটিআরসি।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির কাছে অপারেটর বদলের খরচ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হয়। সাংবাদিকেরা উল্লেখ করেন, ভারতে অপারেটর
বদলে গ্রাহকের ব্যয় হয় মাত্র ৪ রুপি। জবাবে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, দেশে এমএনপি একটি নতুন সেবা। শুরুতে সেবাদাতার জন্য এটি ভায়াবল (টিকে থাকতে সমর্থ) করতে প্রয়োজনীয় মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে, তখন গ্রাহকের মাশুল কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষমতা বিটিআরসির আছে। তিনি বলেন, সিম পরিবর্তনের কর কমাতে এনবিআরের সঙ্গে অনেক দেনদরবার হয়েছে। তারা এটা তুলে নিতে রাজি নয়। এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতে এমএনপি সেবা চালু হয়। গত ৩১ জানুয়ারি দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া গ্রাহকের ফি ১৯ রুপি থেকে কমিয়ে ৪ রুপি নির্ধারণ করে। অবশ্য বিটিআরসি ভারতের সঙ্গে তুলনায় রাজি নয়। তারা বলছে, ভারতে গ্রাহকসংখ্যা অনেক বেশি বলে তারা ব্যয় কমাতে পেরেছে।

টাকা শেষ করে বদল
একজন গ্রাহক একবার অপারেটর বদল করলে তাঁকে ৯০ দিন নতুন অপারেটরে থাকতে হবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অপারেটর বদলের সময় পুরোনো সিমে কোনো টাকা বা ইন্টারনেট ডেটা থাকলে তা নতুন অপারেটরের হিসাবে জমা হবে না। অর্থাৎ ডেটা ও টাকা আগে ব্যবহার শেষ করে এমএনপির জন্য আবেদন করতে হবে, নয়তো টাকা খোয়া যাবে। তবে অব্যবহৃত টাকা যাতে সরকারের কোষাগারে জমা করা যায়, তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি আরও জানায়, গ্রাহকের কাছে পুরোনো অপারেটরের কোনো পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করার পরই কেবল অপারেটর বদল করা যাবে। সেবাকেন্দ্রে গেলে তা খতিয়ে দেখেই অপারেটর বদলের অনুরোধ নেওয়া হবে।

বিকাশ-রকেট আগের মতোই
অপারেটর বদল করলেও মোবাইলে থাকা বিকাশ, রকেটের মতো আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হিসাব আগের মতোই ব্যবহার করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। তবে অপারেটরের আলাদা আলাদা যেসব সেবা রয়েছে, তা অপারেটর বদলের পর আর ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, কোনো অপারেটরের নম্বর দিয়ে যদি রেল বা বাসের টিকিট কাটা যায়, ওই অপারেটর ছেড়ে গেলে আর সে সুবিধা পাওয়া যাবে না।

যেভাবে বদল
অপারেটর বদলাতে গ্রাহককে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের (যেখানে যেতে আগ্রহী) কাস্টমার কেয়ার বা সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু থাকায় গ্রাহকদের ছবি লাগবে না। কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিলে গ্রাহককে নতুন একটি সিম দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নতুন সিমটি চালু হওয়ার কথা।

এ বিষয়ে ইনফোজিলিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন বলেন, প্রি-পেইড সিমের ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার কথা বলা হলেও সেবাটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। তবে পোস্ট-পেইডের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়া চলার সময় গ্রাহক পুরোনো সিম ব্যবহার করতে পারবেন।

বিটিআরসির সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির কমিশনার রেজাউল কাদের, আমিনুল হাসান, ইনফোজিলিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন, সিইও মোহাম্মদ জুলফিকার ও বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।