পোশাকের ব্যবসা ফিরে যাবে!

আগামী ১০ বছরের মধ্যেই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এসব দেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো এমন পরিকল্পনা করছে।

চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের পরিবর্তে মেক্সিকো ও তুরস্কের মতো কাছাকাছি দেশগুলো থেকে পোশাক উৎপাদন করাতে চায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। সেটি হলে কম সময়ের মধ্যে নিজেদের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাক তুলতে পারবে বলে মনে করছে তারা। ফ্যাশন দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় কম সময়ে পোশাক পাওয়া ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তৈরি পোশাক খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্য-সংক্রান্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সোর্সিং জার্নালের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮০টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকদের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি।

‘পোশাক উৎপাদন কি আবার নিজ দেশে ফিরছে?’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকেরা প্রত্যাশা করছেন, তাঁদের চাহিদার অর্ধেকের বেশি পোশাক আশপাশের দেশ থেকে তৈরি করাতে চান এবং সেটি ২০২৫ সালের মধ্যে। তার মানে হচ্ছে, চীন, বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ব্যবসা আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চলে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফ্যাশন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সময়মতো বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য তুলতে না পারলে অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। তাই কম সময়ের মধ্যে সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য বুঝে পাওয়া ক্রেতাদের কাছে ১ নম্বর অগ্রাধিকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো থেকে উৎপাদনের পর সমুদ্রপথে ৩০ দিনের কম সময়ে পণ্য আনা সম্ভব নয়। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের উচিত পশ্চিমা বিশ্বে কীভাবে দ্রুত পণ্য সরবরাহ করা যায়, সেই কৌশল বের করা।

অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি ক্রেতাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতাদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। এমন তথ্য উল্লেখ করে ম্যাকেঞ্জির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে এক জোড়া জিনস প্যান্ট উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে ১২ দশমিক শূন্য ৪ মার্কিন ডলার খরচ হয়। সেটি মেক্সিকোতে করলে লাগে ১০ দশমিক ৫৭ ডলার। আবার চীন থেকে এক জোড়া জিনস প্যান্ট উৎপাদন করে ইউরোপে আনতে ১২ দশমিক ৪৬ মার্কিন ডলার খরচ হয়। সেটি তুরস্কে করলে লাগে ১২ দশমিক শূন্য ৮ ডলার। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের থেকে মেক্সিকো এবং ইউরোপের দেশগুলোর জন্য চীনের চেয়ে তুরস্কে পণ্য উৎপাদনের খরচ কম। তা ছাড়া চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ইউরোপের জার্মানিতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ৩০ দিন লাগে। অন্যদিকে সড়কপথে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২ ও তুরস্ক থেকে জার্মানিতে পণ্য পরিবহনে লাগে ৩-৬ দিন। তবে চীনের থেকে বাংলাদেশ উৎপাদন খরচ এখন পর্যন্ত কম বলে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

সারা বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে চীন শীর্ষ স্থানে। তারপরই বাংলাদেশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক গত রাতে  বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই অনেক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করছি। সব ক্রেতা ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক করেও না। তা ছাড়া সস্তা পোশাক উৎপাদনের যে সক্ষমতা আমাদের আছে, তা অন্য দেশের নেই। ১০ বছর পর আমাদের খরচ যখন বাড়বে তখন মেক্সিকো ও তুরস্কের ব্যয়ও বাড়বে। ফলে রাতারাতি কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের ক্রয়াদেশ পাওয়া থেকে শুরু করে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছতে ১১০ দিন লাগত। সেটি কমে ৪৫-৬০ দিনে নেমে এসেছে।’

ফজলুল হক আরও বলেন, ‘ক্রেতা প্রায়ই “মাইন্ড গেম” (মনস্তাত্ত্বিক লড়াই) খেলেন। নিত্যনতুন তত্ত্ব হাজির করেন, যাতে পোশাকের দাম নিয়ে দর–কষাকষিতে আমরা দুর্বল অবস্থানে থাকি। ম্যাকেঞ্জির প্রতিবেদনটি আমার কাছে তেমনই মনে হচ্ছে।’ অবশ্য চীনের সম্পর্কে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, তা ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।