কমপ্রেসর যন্ত্রাংশের ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহার

দেশীয় উৎপাদনকারীদের সুবিধার্থে ফ্রিজ ও এসির কমপ্রেসর তৈরির কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে ভ্যাট ও অন্য সম্পূরক শুল্ক তুলে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার এনবিআরের দেওয়া দুই প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।

গত বছরের ১ জুলাই ফ্রিজ ও ও এসি নির্মাণের কাঁচামালের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক উঠিয়ে নেয় এনবিআর। এর এক বছরের বেশি সময় পর আবার এই সিদ্ধান্ত নিল এনবিআর। গত বছর নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ৩০ জুন। আর গত বছর এসি ও ফ্রিজের নানা কাঁচামালের ওপর ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক উঠিয়ে নেওয়া হলেও এই দুই পণ্য নির্মাণে অপরিহার্য কমপ্রেসরের যন্ত্রাংশ এর আওতার বাইরে ছিল। এখন দেশীয় ফ্রিজ, এসি ও কমপ্রেসর উৎপাদনকারীরা এসব পণ্য তৈরির সরঞ্জাম ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।

এনবিআরের ভ্যাট নীতি বিভাগের সদস্য মো. রেজাউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতেই আমরা এই সুযোগ দিয়েছি।’
রেজাউল হাসান বলেন, আগে কমপ্রেসর বিদেশ থেকে আনতে হতো। তাতে দেশের অর্থ বাইরে চলে যেত। এখন আমরা এর যন্ত্রাংশের ওপর থেকে ভ্যাট ও শুল্ক তুলে নেওয়ার ফলে দেশেই এসব তৈরি হবে। দেশের অর্থ দেশেই থাকবে।

দেশীয় এসি ও ফ্রিজ উৎপাদনকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এবারের সুবিধা দেওয়া হলো বলে এনবিআর সূত্র জানায়।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে এসি ও ফ্রিজের কমপ্রেসর তৈরির সরঞ্জামের একটি তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এনবিআর বলেছে, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক রেয়াতের সুবিধা পেতে হলে দেশীয় উৎপাদনকারীদের এসব যন্ত্রাংশ থাকতে হবে।

দেশে দিন দিন এসি ও ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। আয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে যাওয়া এবং বিদ্যুতের সংযোগ প্রসারিত হওয়ার ফলে এই দুই পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এতদিন দেশীয় কোম্পানিগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে এসি ও ফ্রিজের যন্ত্রাংশ অ্যাসেম্বিলংয়ের কাজ শুরু করেছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই কর প্রশাসন এসব যন্ত্রের করমুক্ত করল।

দেশের আধা ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়ালটন, মার্সেল, যমুনা এবং মিনিস্টার এসি ও ফ্রিজের যন্ত্রাংশ বানায়। এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বেশির ভাগের বিক্রি দেশেই হয়।

এসি ও ফ্রিজ তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কমপ্রেসর। বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দীন মনে করেন, কর রেয়াতের ফলে এখন দেশীয় উৎপাদনকারীদের খরচ কম পড়বে। এখন দেশে শুধু ওয়ালটন কমপ্রেসর তৈরি করে। শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এখন বিদেশ থেকে কমপ্রেসর আমদানি কমে যাবে। কারণ এখন এগুলো দেশেই তৈরি হবে। তিনি জানান, এখন দেশে প্রতি বছর কমপ্রেসরের চাহিদা ৩০ লাখ। নতুন ফ্রিজ তৈরি করতে এবং পুরোনোগুলো ঠিক করতে এই কমপ্রেসর ব্যবহার হয়।

এসি ও ফ্রিজ ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমপ্রেসরের যন্ত্রাংশের ওপর থেকে ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে এখন এই পণ্যের দাম কমতে পারে। শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলা যায়, এখন ফ্রিজের মান ভালো হবে। আর এটা কেনাও খানিকটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।’

এসি ব্যবসার সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এনবিআরের উদ্যোগের ফলে এসির দামও এখন কমবে। শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এখন যেভাবে এসিকে একটি বিলাসদ্রব্য হিসেবে মনে করা হয় ভবিষ্যতে তেমন থাকবে না।

শাহাবুদ্দিন জানান, এখন দেশে দেশে প্রতি বছর তিন লাখ এসির চাহিদা আছে। প্রতি বছর এই চাহিদা ১৫ শতাংশ করে বাড়ছে।