বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে ইউরোপ

পৃথিবীর শীর্ষ বেশ কয়েকটি গাড়ি কোম্পানির জন্ম ইউরোপে, কিন্তু এই খাতের ভবিষ্যৎ নির্মাণে তারা চীনের কাছে হেরে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন এখন চালিকা শক্তি। ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন,  ভবিষ্যতে গাড়িশিল্পের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই শিল্পে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তবে ইউরোপ বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। সম্ভবত এই লড়াইয়ে শামিল হতে সে অনেকটা দেরিই করে ফেলেছে।

মিলানভিত্তিক চিন্তাশালা এনি এনরিকো মাতেইয়ের জ্বালানি বিশ্লেষক সিমোন তাগলিয়েপিয়েত্রা বলেন, ইউরোপের গাড়ি কোম্পানিগুলো ব্যাপক হারে চীনে উৎপাদন শুরু করবে। যে ইউরোপে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও রেনল্টের মতো গাড়ি কোম্পানির জন্ম হয়েছে, তার জন্য এটি বড় হুমকি।

তবে কোম্পানিগুলোর পক্ষে চীনে কারখানা করার যুক্তি আছে। কারণ, গাড়ির সিংহভাগ ক্রেতাই চীনা। আর চীনে গাড়ি বানালে আরেকটি বড় সুবিধা আছে। সেটা হলো, এতে তারা বড় ধরনের শুল্কের হাত থেকে বেঁচে যাবে। চীনে গাড়ি উৎপাদনের আরেকটি সুবিধা হলো, ব্যাটারিও সেখানে উৎপাদিত হয়। বৈদ্যুতিক গাড়ির মূল্যের ৪০ শতাংশই যায় ব্যাটারির পেছনে। সে জন্য তাগলিয়েপিয়েত্রা বলেন, ব্যাটারি যেখানে উৎপাদিত হয়, সেখানে গাড়ি উৎপাদনের যুক্তি আছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেনজির তথ্যানুসারে পৃথিবীর তাবৎ বৈদ্যুতিক গাড়ির লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দুই-তৃতীয়াংশ চীনে উৎপাদিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক গেভিন মন্টগোমারি বলেন, ইউরোপ বৈদ্যুতিক গাড়ির মোট বাজারের মাত্র ১ শতাংশ । তাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি তার হাতে নেই।

অন্যদিকে পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার হলো চীন। সারা পৃথিবীতে যত বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়, তার অর্ধেকই হয় চীনে। সে কারণে আন্তর্জাতিক গাড়ি কোম্পানিগুলো চীনে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করছে।

ভক্সওয়াগন গত বছর ঘোষণা দেয়, তারা চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের শীর্ষ কোম্পানি টেসলা সাংহাইয়ে কারখানা বানাচ্ছে। তারা সেখানে বছরে পাঁচ লাখ গাড়ি উৎপাদন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তারা উৎপাদন করে এক লাখ গাড়ি। ইউরোপের উদীয়মান ব্যাটারি উৎপাদনকারীরাও নিজ দেশের চেয়ে চীনেই বেশি বিনিয়োগ করছে।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক লিথিয়াম ওয়ের্কসের চীনে ইতিমধ্যে দুটি কারখানা আছে। এরপরও তারা সাংহাইয়ের উপকণ্ঠে ১৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

চীনের এই বিপুল অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে বছরে যে পরিমাণ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উৎপাদিত হবে, তা দিয়ে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার গাড়ি চালানো সম্ভব। লিথিয়াম ওয়ের্কসের চেয়ারম্যান কিস কোলেন সিএনএনকে বলেছেন, চীনের অবকাঠামোগত সুবিধা ভালো। এ ছাড়া সেখানে কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়া সহজ। তিনি এ-ও বলেন, ইউরোপে কারখানা করতে গিয়ে তাঁরা লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে পিছিয়ে এসেছেন।

কিস কোলেন আরও বলেন, ইউরোপে ব্যবসা করতে গেলে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু চীনা সরকারের এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা আছে বলে তিনি জানান, যেটা ইউরোপের নেই।

চীন বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তারা ক্রেতাদের নানা প্রণোদনাও দিচ্ছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। ইউনিয়নের নির্বাহী বিভাগ ইউরোপিয়ান কমিশন এ বছর ব্যাটারি উৎপাদনে কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।