যুক্তরাজ্যে খাবারের দাম বাড়ার আশঙ্কা

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কারনের আশঙ্কা, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বিশৃঙ্খল হলে যুক্তরাজ্যে খাদ্যের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা আছে। সাংসদদের তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হলে খাবারের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে সে রকম কিছু না হলে দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ব্রেক্সিটের প্রভাব কেমন হবে—ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও তার গভর্নর বিভিন্ন সময় তা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। তারা দেখেছে, এতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। মার্ক কারনের সহকর্মী স্যার জন কানলিফ বলেছেন, যুক্তরাজ্য প্রয়োজনীয় খাবারের প্রায় অর্ধেক আমদানি করে থাকে।

পাউন্ডের দরপতন, শুল্ক আরোপ ও সীমান্তে ব্যবসায়িক লেনদেনের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যের দাম বাড়বে। দেশটির রাজস্ব কমিটির সাংসদদের উদ্দেশে কারনে বলেন, ‘পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হলে খরচ ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে।’

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কারনে আরও বলেন, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে দেশটির বন্দরগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের অধীনে বাণিজ্য করতে প্রস্তুত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সময় আমাদের বন্দরগুলো ডব্লিউটিওর নিয়মের অধীনে সম্পর্ক গড়তে প্রস্তুত নয়। সহকর্মীরা, আমার প্রতিনিধিরা এসব বন্দরে গিয়ে সরাসরি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা বেসরকারি লজিস্টিক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তাই বলতে পারি, আমরা সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করেছি।’

তবে অনেক সাংসদই কারনেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে এক রকম আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। জবাবে কারনে বলেন, ‘ব্যাংকের পক্ষ হয়ে মূল্যায়ন তৈরি করতে গিয়ে তাঁরা অনেক কাজ করেছেন। তবে ব্যাপারটা পরীক্ষার মতো নয়, এর জন্য সারা রাত আমরা জেগে থাকিনি।’ তিনি জানান, ২০ জন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদের একটি দল কয়েক বছর ধরে এই মূল্যায়ন করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকের ১৫০ জন কর্মকর্তাকেও এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এরপর মুদ্রানীতি কমিটি ও ব্যাংকের আর্থিক নীতিবিষয়ক কমিটি এই প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে।

যেকোনো দেশের আর্থিক খাত দেখভালের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ব্রেক্সিটের অনিশ্চয়তার মধ্যে আর্থিক খাতে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। গভর্নর কারনে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের খাতের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনই রাতে ভালোভাবে ঘুমাচ্ছি। আমাদের আর্থিক খাতকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করেছি।’

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর স্যাম উডসও সাংসদদের সামনে হাজির হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট গণভোটের পর যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের পাঁচ লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষের চাকরি গেছে, সংখ্যাগত হিসেবে এটি ‘বেশ কম’।

তবে কিছুদিন আগে সরকারের বিশ্লেষণেই দেখা গেছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ব্রেক্সিট পরিকল্পনা গৃহীত হলে আগামী ১৫ বছরে ব্রিটিশ অর্থনীতি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে। আর নতুন চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হলে অর্থনীতি ৯ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে।