ঋণের বিপরীতে ১২ ব্যাংকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক
সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক

একটি ব্যাংক কতটা ভালো চলছে, তার কিছুটা দৃশ্যমান হয় পরিচালনার দিক থেকে ব্যাংকটি মৌলিক নিয়মকানুন মানতে পারছে কি না, তা দিয়ে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার বিপরীতে যথাযথ মানে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা। মূলত পরিচালন মুনাফা থেকেই এসব সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে এসব ঋণ আদায় না হলেও ব্যাংকের ভিত্তি ততটা নড়বড়ে হয় না। ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে কম পড়ে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র খাতের কয়েকটি ব্যাংক বছরের পর বছর চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারছে না। তবে গত দুই বছরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকও একই সমস্যায় পড়েছে।
এর মধ্যে অর্থ পাচার ও ঋণ জালিয়াতির কারণে আলোচনায় থাকা এবি ব্যাংক, মালিকানা পরিবর্তন হওয়া সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। এ ছাড়া নানা অনিয়মে জর্জরিত ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ার ব্যাংকও একই সমস্যায় পড়েছে। আবার স্ট্যান্ডার্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকও সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে, এসব ব্যাংকের ঋণের মান যে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তা স্পষ্ট। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, দুই বছর আগে যা ছিল ৯৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এর ফলে ব্যাংকটি এখন চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতিও রাখতে পারছে না। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২৩ কোটি টাকা।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা, দুই বছর আগে যা ছিল ৭৩৮ কোটি টাকা। মালিকানা পরিবর্তনের পর এখন নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিও দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬১ কোটি টাকা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা, দুই বছর আগে যা ছিল ৭১৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এখন নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ১০২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশের কারণে কয়েকটি হিসাব আগে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। এখন তা খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে, যথাযথ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা যায়নি।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা, দুই বছর আগে যা ছিল ৫২১ কোটি টাকা। এ কারণে এখন ৬২ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি।
এদিকে সেপ্টেম্বর শেষে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২১ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৯৬ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দুরবস্থার মধ্যে আছে।