জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান কমছে

টাকা। প্রতীকী ছবি
টাকা। প্রতীকী ছবি

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১ শতাংশ অবদানও নেই দেশের বিমা খাতের। অথচ দেশে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন নামে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বড় দুটি সংস্থা রয়েছে। আর বেসরকারি ও বিদেশি মিলিয়ে রয়েছে আরও ৭৬টি কোম্পানি।
জিডিপিতে অবদানের দিক থেকে বিমা খাত যে শুধু পিছিয়ে আছে, তা নয়। c
বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) খসড়া প্রতিবেদনে বিমা খাতের এই চিত্র উঠে এসেছে। দেশের পঞ্চম বাণিজ্যনীতি পর্যালোচনা (৫ম ট্রেড পলিসি রিভিউ) কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ নিয়ে গত মাসে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত সচিব কামরুন্নাহার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে নিযুক্ত ইকোনমিক মিনিস্টার সুপ্রিয় কুমার কুন্ডু, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব সাইদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডব্লিউটিওর খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির তুলনায় বিমা খাতের অবদান খুবই কম। গোটা বিশ্বে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও এটি বেশ কম, ১ শতাংশের কম। জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জীবনবিমার অবদান দশমিক ৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিমার অবদান দশমিক ২ শতাংশ।
বৈঠকে বলা হয়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গেলে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) শক্তিশালী করতে হবে। জোরদার করতে হবে সংস্থাটির তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকেও।
প্রিমিয়ামের হতাশাজনক চিত্র
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে জিডিপির তুলনায় মোট প্রিমিয়ামের হতাশাজনক চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছয় বছর ধরেই প্রিমিয়ামের হার কমছে। ২০১২ সালে জীবনবিমা ও সাধারণ বিমার মোট প্রিমিয়ামের হার ছিল মিলিয়ে জিডিপির দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে জীবনবিমার ছিল দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সাধারণ বিমার দশমিক ২১ শতাংশ।
প্রতিবছর কমতে কমতে ২০১৭ সালে এসে সাধারণ বিমা ও জীবনবিমা মিলিয়ে জিডিপিতে অবদান দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে জীবনবিমা দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সাধারণ বিমা দশমিক ১৫ শতাংশ।
বিমা খাতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি এবং পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সিইও বি এম ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিমা খাতের মূল সমস্যা ভাবমূর্তির। আগের বিমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে সরকার যখন আইডিআরএ গঠন করল, ভাবমূর্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে সেটাই বড় একটি অর্জন হলো।
জানতে চাইলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডিপির তুলনায় বিমা খাতের অবদান কমছে এটা ঠিক। তবে বিমা খাত যে বড় হচ্ছে, তা-ও অস্বীকারের উপায় নেই। বলা যেতে পারে যে জিডিপির আকার যত বড় হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিমা খাতের গতি বাড়ছে না।’
শফিকুর রহমান পাটোয়ারী অবশ্য বিমা খাত নিয়ে আশাবাদী বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ খাতকে চলতে হয়েছে এবং এখনো চলতে হচ্ছে। তবে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সমস্যা থাকবে না। খাতটির ভাবমূর্তিও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অনেক বাড়বে।

বিমা দাবি নিষ্পত্তি কমেছে
প্রতিবেদনে বিমা দাবি নিষ্পত্তির হারের ৯ বছরের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই হারও আগের তুলনায় কমছে। জীবনবিমার চেয়ে সাধারণ বিমার নিষ্পত্তির হারের অবস্থা খুবই খারাপ। ২০০৯ সালে ৭৭ শতাংশ বিমা দাবি নিষ্পত্তি হয়েছিল। ওই বছর জীবনবিমার নিষ্পত্তির হার ৮১ শতাংশ, আর সাধারণ বিমার নিষ্পত্তির হার ৬৫ শতাংশ।
২০১৭ সালে এসে দুই ধরনের বিমা মিলিয়ে নিষ্পত্তির হার দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৯ বছর আগের তুলনায় জীবনবিমায় এ হার সামান্য বেড়ে ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও সাধারণ বিমায় এ হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং জীবন বীমা করপোরেশনের প্রবৃদ্ধিও পাঁচ বছরের ব্যবধানে অনেক কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে অবশ্য বলা হয়, বিমা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ বিমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প (বিআইএসডিপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আইডিআরএ এবং দুই করপোরেশনের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানির করপোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত বিমা কোম্পানির করপোরেট কর ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইনস্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি বি এম ইউসুফ আলী আশা প্রকাশ করেন, সরকারের ইতিবাচক প্রচারণা থাকলে খাতটির অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালায়, কিন্তু সরকারের প্রচারণাটা বেশি জরুরি। এতে মানুষ আস্থা পায়।