খেলাপি ঋণই বড় সমস্যা: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফাইল ছবি
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণই বড় সমস্যা বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে বলা যাবে না। তবে ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। তা–ও আবার সরকারি ব্যাংকগুলোতে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এই হার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

সচিবালয়ে গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধানটা একটু কঠিন—এমন মন্তব্য করে মুহিত বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে করণীয় বিষয়ে তিনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন, যা আগামী সরকারের জন্য রেখে যাবেন। ওই প্রতিবেদনে থাকবে ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবেদনটি এখনো লিখতে শুরু করেননি বলেও জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময় ব্যাংক খাত সরকারি থাকলেও এখন ব্যক্তিমালিকানা অনেক প্রসারিত হয়েছে। একসময় সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ছিল। এখন আর সেটা নেই। ব্যাংকের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এ জন্য ভবিষ্যতে নতুন কোনো ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হবে না।

সোনালী ব্যাংক ছাড়া বাকি পাঁচ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংক কোম্পানিকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে এসেছেন বলেও জানান মুহিত। তবে সোনালী ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

মুহিত বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য তিনি পাঁচ বছরের একটি কর্মসূচি করছেন, যাতে ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হবে। যারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না, তাদের অবসায়ন বা একীভূতকরণ করা হবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং কমিশনসহ আর্থিক খাতের উন্নতিতেও দেওয়া হবে কিছু পরামর্শ। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংককে মরতে দেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে তাঁর অপ্রাপ্তি বলতে তেমন কিছু নেই। কারণ প্রাপ্তির খাত এত বড় যে অপ্রাপ্তিটা চোখে পড়ার মতো নয়। জেলা বাজেট করতে না পারার কথা উল্লেখ করে মুহিত বলেন, এ জন্য অবশ্য একটি পথ রেখে যাচ্ছেন তিনি। পরবর্তী যেকোনো সরকার তা অনুসরণ করে করতে পারবে।

হল-মার্ক কেলেঙ্কারি ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী হল-মার্ক প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কী মনে হয়?’

গোটা আর্থিক খাতের জন্য ভালো না হলেও একটি গ্রুপের হাতে অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে অনেক ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো প্রশ্ন এসেছে। উত্তর দিতে পারব না। তবে এস আলম খুব বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে।’

সরকারের অনেক ভালো কাজও ম্লান হয়ে যায় কিছু কারণে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবার বলেন, ‘এস আলম একটি হুমকি (থ্রেট) হয়ে উঠছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেন অর্থমন্ত্রী, ‘এস আলমের উত্তরসূরি কে?’

ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবার সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন—এ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ভবিষ্যতে পুনর্গঠন–সুবিধা বড় আকারে দেওয়া হবে না। আর সালমান এফ রহমান যে নির্বাচন করছেন, একে তিনি উৎসাহিত করছেন। কারণ, এর ফলে তাঁর জবাবদিহি আরও বাড়বে।

সরকার যাতে নিয়ন্ত্রণে নেয়—এ জন্য নাভানা গ্রুপের একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা পড়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, একটি বিষয় না থাকলে তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা যেত। অর্থমন্ত্রী হঠাৎ বলেন, প্রত্যেক গ্রুপকেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

প্রত্যেক গ্রুপকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিলে খারাপ বার্তা যাবে না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জানি না। তবে নাভানার প্রধান কারণ হচ্ছে এর মালিকের শরীর-টরির ভালো না।’

দশ বছরে দেশের উন্নয়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রী খুশি এবং এ জন্য তিনি চান বেশি বেশি করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসুক। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং পরবর্তী সরকারের আমলেও দারিদ্র্য নির্মূল কার্যক্রম চলমান থাকবে।

আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে সেই সরকারেও থাকবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাহলে তো আবার ঘানি টানতে হবে। অবশ্য ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। আমার মনে হয় না সে রকম কিছু হবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সব খাতে যেহেতু অবসরপদ্ধতি আছে, রাজনীতিতেও সেই সুযোগ থাকতে হবে। এ জন্য তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে দেশের রাজনীতিবিদেরা অবসরের বিষয়টি বুঝতে চান না।