খেলাপি আদায় ২৮০০ কোটি টাকা

সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক চলতি বছর প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ও ২২ কোটি টাকা অবলোপন করা ঋণ। খেলাপি ঋণের মধ্যে আবার ৯২২ কোটি নগদ আদায় হয়েছে। ব্যাংকটির ঋণ আদায়সংক্রান্ত সব শেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য মিলেছে।

ব্যাংকটির এমন অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে বিপর্যয়ে পড়া সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ব্যাংকটির ঋণ আদায় বাড়ায় কমেছে খেলাপি ঋণ। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। পুরো বছরে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মুনাফা করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যাংকটির।

জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ আদায় ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণও কমছে। আশা করছি বছর শেষে ভালো অবস্থায় যাবে সোনালী ব্যাংক।’

সোনালী ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। তার মধ্য থেকে চলতি বছরে ব্যাংকটি ৭ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। তবে গতকাল পর্যন্ত ব্যাংকটি আদায় করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা আদায় করে স্থানীয় শাখা, যার পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের হিসাবে স্থানীয় শাখার খেলাপি ঋণ ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে আদায় হয় ২৭২ কোটি টাকা, এ বিভাগে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। কুমিল্লায় আদায় হয় ৯১ কোটি টাকা, রংপুর বিভাগে ৮৫ কোটি টাকা, ময়মনসিংহে ৮৩ কোটি টাকা।

এদিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির অবলোপন করা ঋণের স্থিতি ছিল ৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এসব ঋণ বছরের পর বছর আদায় না হওয়ায় অবলোপন করে আর্থিক হিসাব থেকে বাদ দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঋণও অবলোপন করা হয়েছে। অবলোপন করা ঋণ থেকে চলতি বছর মাত্র ২২ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে ব্যাংকটি। যদিও ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, হল-মার্ক কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পথে হাঁটছে সোনালী ব্যাংক। লাগাম টেনেছে বড় ঋণের। আমানতের টাকা বিনিয়োগ করছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে। সোনালী ব্যাংক সেই সুদের ওপর ভর করেই বড় হচ্ছে। সেই সুদে মুনাফাও করছে সবচেয়ে বড় এ ব্যাংক।

সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৮৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে যা বেড়ে হয় ১ লাখ ৩ হাজার ১৬০ কোটি। ২০১৭ সালে আমানত আরও বেড়ে হয় ১ লাখ ৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায়। আর ২০১৭ সালে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা, গত অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। যদিও ২০১৬ সালে ৪২৫ কোটি ও ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে ব্যাংকটির প্রকৃত মুনাফা দাঁড়ায় ৭০৯ কোটি টাকায়। আর ২০১৬ সালে প্রকৃত মুনাফা দাঁড়ায় ১৫১ কোটি টাকায়। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছিল ব্যাংকটি।

খেলাপি ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ১২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, গত জুনে যা ছিল ১৩ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।