চায়ের বাজারে ভোটের ছায়া

>
  • চা বিক্রি গত দুই মাসে ২৫-৩০ শতাংশ বেড়েছে
  • ভোটে সব পক্ষের প্রচার জমজমাট না হওয়ায় বিক্রি আশানুরূপ বাড়েনি বলে জানান বিক্রেতারা
  • দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৪
  • চলতি বছরের ১১ মাসে ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে
  • এ বছর নিলামে চায়ের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২৭৪ টাকা
  • আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ টাকা বেশি
  • চা, চিনি অথবা দুধ—কোনোটারই দাম নির্বাচনকে ঘিরে বাড়েনি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপটি এবার ফুটে উঠেছে চায়ের বাজারে। গত দুই মাসে চা বিক্রি বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। কিন্তু সেটা প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। চা বিপণনকারীরা বলছে, নির্বাচনী প্রচারে দুই পক্ষ সমানতালে সরব থাকলে চা বিক্রি আরও বাড়ত।

চা বিক্রি বাড়লেও চিনির চাহিদা বাড়েনি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, হয়তো অন্য খাতে চাহিদা কমে গেছে বলে চিনির সার্বিক বাজারে নির্বাচনী প্রভাব পড়েনি। চা, চিনি অথবা দুধ—কোনোটারই দাম নির্বাচনকে ঘিরে বাড়েনি। মুড়ির দরও আগের মতো।

এবারের নির্বাচনে বড় সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে নির্বাচনী ক্যাম্প খুলেছেন প্রার্থীরা। সেখানে দিনরাত উপস্থিত থাকছেন নেতা-কর্মীরা। আসছে কাপের পর কাপ চা। অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী পক্ষ ঐক্যফ্রন্ট কোনো কোনো আসনে ভোটের মাঠে নেই। তাদের ক্যাম্পের সংখ্যা কম। প্রচারেও জোর কম। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির অভিযোগ, মামলা-হামলায় তারা কোনো প্রচার চালাতে পারছে না।

এর প্রভাব পড়ছে চায়ের বাজারে। জানতে চাইলে চায়ের বাজারের তৃতীয় শীর্ষ কোম্পানি মেঘনা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) আসিফ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজার খারাপ যায়নি। সাধারণ গড়ের চেয়ে নির্বাচন ঘিরে বিক্রি বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। তবে আরও ভালো যাবে বলে আমরা আশা করেছিলাম।’ সেপ্টেম্বর মাসে চায়ের দাম বেশ বেড়ে গিয়েছিল। এর পেছনের কারণ কি নির্বাচন ছিল, জানতে চাইলে আসিফ ইকবাল বলেন, ‘না, নির্বাচনের কারণে দাম বাড়েনি। তখন আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, চায়ের উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম হবে। এ কারণে বড় কোম্পানিগুলো নিলামে চা কেনার ক্ষেত্রে খুব সক্রিয় ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন বেশ ভালোই হচ্ছে।’

দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৪। চা বোর্ডের হিসাবে, ২০১৬ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৮ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। গত বছর চা উৎপাদন নেমে আসে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার কেজিতে। এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলতি বছরের ১১ মাসে ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৭৪ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা আমদানি হয়েছে চলতি বছরে।

নভেম্বর মাসে নিলামে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো মৌসুমের চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২৯৮ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২৭৪ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ টাকা বেশি। ফলে বাগানমালিকেরা চায়ের ভালো দাম পাচ্ছেন।

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রচারের সময় ছিল। বেচাবিক্রি কেমন হলো জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দোতলার মিতা টি হাউসের বিক্রেতা তারেক হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য বাড়তি কোনো চাহিদা দেখিনি। শীতে একটু বেশি বিক্রি হয়। সেটাই হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ঢাকায় তো নির্বাচনের তেমন আমেজ দেখি না।

মিতা টি হাউসে চায়ের দর সাধারণ খুচরা দোকানের চেয়ে কম। সেখানে প্রতি কেজি ভালো মানের খোলা চা ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চা বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৪০০ টাকার আশপাশের দরে। তারেক হোসেন বলেন, খোলার চা–পাতার মধ্যে ৩৫০-৩৮০ টাকা দরে কিছু চা বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজারের মুদিদোকানগুলোতে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, নির্বাচনের কারণে বাড়তি চাহিদা তৈরি হতে দেখা যায়নি, আবার দরও বাড়েনি। বরং চিনির দর কেজিতে দুই টাকার মতো কমেছে।

চিনির বাজারের সারা দেশের চিত্রের একটা ধারণা পাওয়া যায় পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কারণ, তাঁরা বিভিন্ন জেলায় চিনি সরবরাহ করেন। জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো বাড়তি চাহিদা দেখিনি। দামও পড়তি।’ চা বাড়লে চিনি বিক্রি বাড়বে না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হতে পারে চায়ের কারণে চিনি বিক্রি যতটুকু বেড়েছে, ততটুকু আবার অন্য খাতে কমে গেছে। এখন তো ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন ভালো অবস্থা নেই।