জনশক্তি রপ্তানি কমলেও প্রবাসী আয়ে সুসময়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

• ২০১৮ সালে জনশক্তি রপ্তানি কমলেও বেড়েছে প্রবাসী আয়
• গবেষণা সংস্থা রামরু বলছে, গত বছর নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মোচিত হয়নি
• প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার
• আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি

২০১৮ সালে জনশক্তি রপ্তানি কমলেও বেড়েছে প্রবাসী আয়। আলোচ্য সময়ে জনশক্তি রপ্তানি ২৭ শতাংশ কমেছে। তার বিপরীতে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায়        ১৫ শতাংশ।

অভিবাসন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল, মূলত এর প্রভাবে বেড়েছে প্রবাসী আয়। এর পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় এবং হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রবাসী আয় বেড়েছে।

জনশক্তি রপ্তানিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) বলছে, আগের বছরগুলোর মতো গত বছরেও নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মোচিত হয়নি। ২০১৮ সালে নারীশ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার হার গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। গত বছর আট শতাধিক নারীশ্রমিক নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। এদিকে ২০১৮ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে যান। সেখানে ২০১৭ সালে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। সেই হিসাবে ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ জনশক্তি রপ্তানি কমেছে।

 ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ৬৩ শতাংশ হয়েছে উপসাগরীয় এবং অন্যান্য আরব দেশে। বাকি ৩৭ শতাংশের বেশির ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। এরপর মালয়েশিয়া,কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুরে।

তবে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরব সরকার ‘সৌদিকরণ কর্মসূচির (প্রতি কারখানায় ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক থাকা বাধ্যতামূলক)’ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য ১২ ধরনের চাকরি বন্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। এতে সে দেশের শ্রমবাজার আস্তে আস্তে বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে এসব কাজে জড়িত বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে রামরুর প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, নারী-পুরুষ উভয়ে যেসব দেশে যাচ্ছে সেটির সামগ্রিক মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, দেশের শ্রমবাজারে বরাবরই একটি বা দুটি দেশের আধিপত্য। কখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত, কখনো মালয়েশিয়া বা সৌদি আরব। এক দেশকেন্দ্রিক বাজার ব্যবস্থার অসুবিধা হলো সেই দেশে কোনো সমস্যা বা বিপর্যয় দেখা দিলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারও বিপদের মুখে পড়ে।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, প্রায় ছয় বছর পর বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার খুলেছে। প্রকৃতপক্ষে পুরুষ শ্রমিকদের জন্য বাজার বন্ধই রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাত শুধু নারী গৃহকর্মী গ্রহণ করছে। ২০১৮ সালে মাত্র ৩ হাজার ২৩৫ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন, যাঁদের অধিকাংশই নারী। দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ধীরে ধীরে ১৯টি পেশায় পুরুষ কর্মী নেবে দেশটি।

গত বছর বিদেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী যান কুমিল্লা জেলা থেকে। তবে আগের বছরগুলোর মতো গত বছরেও পার্বত্য জেলাগুলো থেকে বিদেশে শ্রম রপ্তানি হয়নি বললেই চলে। 

কমেছে নারী অভিবাসন

২০১৫ সাল থেকে দেশের নারীশ্রমিকদের বিদেশ যাওয়া ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৭ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক নারীশ্রমিক বিদেশে যান। কিন্তু ২০১৮ সালে বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যা আবারও কমে এসেছে। ২০১৮ সালে নারীশ্রমিকদের বিদেশ যাওয়া গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। রামরু বলছে, চলতি বছর কমপক্ষে আট শতাধিক নারীশ্রমিক নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। ২০১৮ সালে বিদেশ যান ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন নারী কর্মী। এর বড় অংশই যায় সৌদি আরবে।

বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) চেয়ারম্যান লিলি জাহান প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরব থেকে নারীরা নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসায় মানুষ ভয় পাচ্ছেন। তাই প্রশিক্ষণ নিয়েও অনেকে যাচ্ছেন না।