যেভাবে চলছে, সেভাবে আর না

>
মিরপুর স্টেডিয়ামে গতকাল বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচ পাশাপাশি বসে উপভোগ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল ও  আবুল মাল আবদুল মুহিত। ততক্ষণে সবাই জেনে গেছেন, অর্থমন্ত্রী মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল।  ছবি: বিসিবির সৌজনে্য
মিরপুর স্টেডিয়ামে গতকাল বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচ পাশাপাশি বসে উপভোগ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল ও আবুল মাল আবদুল মুহিত। ততক্ষণে সবাই জেনে গেছেন, অর্থমন্ত্রী মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল। ছবি: বিসিবির সৌজনে্য

আজ অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল তিনি সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ে কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে আর চলবে না। নতুন পরিসরে অর্থ মন্ত্রণালয় যাত্রা শুরু করবে। সেখানে আপনারা অনেক নতুনত্ব দেখবেন। আমি ব্যর্থ হব না, মিথ্যা আশ্বাসও দেব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যাগুলো জানি, এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।’

গতকাল রোববার পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তবে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি আজ সোমবার শপথ নিতে যাচ্ছেন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মান্নান আজ পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।

অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সংস্কার, বিশেষ করে ব্যাংক খাত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোন জায়গা কী অবস্থায় আছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। এসব জেনে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা ঠিক করা হবে। তিনি জানান, প্রতিটি বিষয়ের সমাধানের জন্য সময়সীমা ঠিক করে দেওয়া হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, আপনারা ঠকবেন না। যেসব বিষয়ে বিচ্যুতি আছে, তা ঠিক করে অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে, এটাই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, জীবনে চ্যালেঞ্জ আসবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই বাহাদুরি। প্রতিটি চ্যালেঞ্জই একধরনের সুযোগ তৈরি করে।

অন্যদিকে নিজের নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যে উন্নতি হয়েছে, তা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘আমি কোনো কিছু চেয়ে নিইনি, আমার কাছেই এসেছে। আমি বিধিবিধান মেনে কাজ করি।’

অন্যদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একে অপরের পরিপূরক। আমরা ভবিষ্যতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করব। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত করা হবে।’

এডিপি বাস্তবায়ন ২৭%

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। টাকা খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। গতবার একই সময়ে ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। তখন ৪৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।

এদিকে অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এডিপির মাত্র চার ভাগের এক ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নে তেমন গতি নেই। অথচ বছরের শুরুতেই পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে সভা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন নেই। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এডিপির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে থাকে।

চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ব্যয়ও আছে। এডিপিতে ১ হাজার ৫০৭ টি প্রকল্প রয়েছে,যেগুলোর বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া বরাদ্দহীন ও অননুমোদিত প্রকল্প আছে ১ হাজার ৩৩৮টি।

দেশজ উৎস থেকে এবার এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশীয় উৎস থেকে দেওয়া বরাদ্দের মধ্যে ২৮ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার একই সময়ে খরচ হয়েছিল ২২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। তবে বিদেশি সহায়তার অর্থ খরচ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে।

এবার এডিপিতে বিদেশি সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ আছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত ছয় মাসে ১৭ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার খরচ হয়েছিল ১৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া এবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৬ মাসে ২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। এ খাতে বরাদ্দ ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা।