'চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে এখনো একটা মিথ'

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকে একটা ‘মিথ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ। তিনি বলেছেন, চীনের মতো জাপানেরও একই অবস্থা।দেশ দুটি এদেশে শিল্প স্থাপন করে না।
বিওআইয়ে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি একথা বলেন।এতে বিশ্বব্যাংক, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বোর্ডকেই ঢেলে সাজাতে হবে। একে গড়ে তুলতে হবে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে। পরিবর্তন আনতে হবে এর জনবলকাঠামোতে।
বক্তারা বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের ব্যবস্থা করা, বিনিয়োগের জন্য খাতভিত্তিক গবেষণা এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দেন।
বিওআই চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের সমস্যা সবারই জানা, কিন্তু সমাধান কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।
বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল্লাহ বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বোর্ডের পুনর্বিন্যাস দরকার। দরকার একে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ভালো ফল দেয়। নারায়ণগঞ্জের আদমজী পাটকলে ইপিজেড হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এখানে পাটকল তৈরি করা যেতে পারে। তা কতটুকু যৌক্তিক হবে—ভেবে দেখা উচিত।
এ কে এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিনিয়োগ আকর্ষণে খাতভিত্তিক গবেষণা দরকার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) নিয়েও ভালো কিছু করা দরকার। কিন্তু, পিপিপি নিয়ে সরকার ভালো অবস্থানে নেই।’ বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান এ কে এম আবদুল্লাহ।
উল্লেখ্য, বিনিয়োগ বোর্ড পরিচালিত হয় মূলত প্রেষণে নিয়োগ করা লোকবল দিয়ে। যে কারণে কেউ এই সংস্থায় কাজ করায় মনোযোগ দেয় না।
চীনা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এ কে এম আবদুল্লাহকে উদ্দেশ করে এস এ সামাদ বলেন, চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে এখনো একটা ‘মিথ’ বা পৌরাণিক কাহিনি। কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগই যেখানে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কার যেখানে দুই কোটি ডলার, চীনের বিনিয়োগ সেখানে মাত্র এক কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের শীর্ষে থাকা নয়টি দেশের নাম উল্লেখ করেন এস এ সামাদ। এগুলো হচ্ছে: যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, মিসর, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। বিওআইয়ের নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘দুঃখজনক এবং আশ্চর্যজনক যে, চীনের মতো জাপানেরও একই অবস্থা। বাংলাদেশে তারা শিল্প স্থাপন করে না।’
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, বিনিয়োগের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জমি। ময়মনসিংহে বিশাল জমি রয়েছে। মালিকেরা তা ফেলে রাখছেন। কিন্তু শিল্পের জন্য কোনো কাজে লাগছে না এই জমি। জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বিওআইকে এগিয়ে আসতে বলেন মাতলুব আহমাদ।
মাতলুব আহমাদকে ইঙ্গিত করে এস এ সামাদ বলেন, ‘ময়মনসিংহে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাব কই?’ মাতলুব আহমাদ তখন বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জে তো গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা নেই। সরকার ঘোষণা করুক, ওই অঞ্চলে বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়া হবে।’
ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শাহজাদা হামিদ বলেন, জমি সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, পঞ্চিমবঙ্গেও রয়েছে। কিছু করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই এ দেশে বিভিন্ন ‘প্রতিরোধ’ সংগঠন বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।
শাহজাদা হামিদ আরও বলেন, এ দেশে গ্রামীণফোনের বড় বিনিয়োগ বাতাসে এবং সাবমেরিন কেবলের আরেক বড় বিনিয়োগ মাটির নিচে। তিনি বিওআইকে পরামর্শ দেন, তারা যেন ডাচ সরকারের প্রতি এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।