বেড়েছে বাসা ভাড়া, রোজকার খরচ

>
  • দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসার ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ
  • চালের গড় মূল্য বেড়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ
  • সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাবানের দাম, প্রায় ২০ শতাংশ

সদ্য বিদায়ী ২০১৮ সালে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। আর পণ্যমূল্য ও সেবা সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪৪ এবং ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। তার মানে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম ছিল।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তাস্বার্থ–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালের ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবা সার্ভিসের তথ্য পর্যালোচনা করে ক্যাব হিসাবটি করেছে। এই হিসাব শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয়বহির্ভূত।

ভোক্তার ঝুলিতে যেসব পণ্য ও সেবা রয়েছে, সেসব পণ্য ও সেবা পরিবারের মোট ব্যয়ের সঙ্গে তুলনা করে পণ্য ও সেবার ওজনের ভিত্তিতে জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই হিসাব করা হয়েছে। ক্যাবের পর্যবেক্ষণ হলো, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সব ধরনের চালের গড় মূল্য বেড়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাবানের দাম, প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে মাছের দাম সাড়ে ১৩ শতাংশ, শাকসবজিতে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, চা-পাতায় ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, পান-সুপারিতে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, তরল দুধে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। ওয়াসার সরবরাহ করা পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ। দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসার ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গেল বছর গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং বাস ও রেলের ভাড়া বাড়েনি। যেসব পণ্যের মূল্য বহুলাংশে স্থিতিশীল ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধ। ২০১৮ সালে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বহুলাংশে স্থিতিশীল ছিল এবং বছর শেষে চালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম ছিল নিম্নমুখী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোটা চালের দাম ১৫ শতাংশ, ডালের দাম গড়ে ১৭ শতাংশ, তেলের দাম ২ শতাংশ, মসলার দাম গড়ে ২২ শতাংশ, শাকসবজির দাম প্রায় ১১ শতাংশ এবং চিনির মূল্য ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০১৮ সালে এর আগের বছরের তুলনায় ডাল, লবণ, মসলা ও চিনি ইত্যাদি পণ্যের দাম কমেছে।

প্রশ্নের জবাবে গোলাম রহমান বলেন, এটি সারা দেশের চিত্র নয়, খণ্ডচিত্র। সত্যিকার চিত্রের কিছুটা হেরফের হতে পারে। পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় ব্যাপক হেরফের হওয়ার কথা নয়। এখানে ঢাকা শহরের চিত্রটা বেশি এসেছে। এখান থেকেই সারা দেশের ব্যাপারেও একটা অনুমান করা হয়।

ক্যাবের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে মানুষের আয় বাড়ছে। কারও আয় বেড়েছে কোটি টাকা, কারও বেড়েছে শত টাকা। যেসব পরিবারের আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৬ শতাংশের বেশি, তাদের জন্য এটি সহনীয়। কিন্তু যাদের আয় ৬ শতাংশ বাড়েনি, তাদের জন্য কষ্টকর। তিনি মনে করেন, আয় বৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। জীবনযাত্রায় ব্যয় সহনীয় থাকুক, আয় বৃদ্ধি দ্রুত হোক। তাহলে জীবনমানের উন্নতি হবে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়েনি, পরিবহনের ভাড়া বাড়েনি। অন্যান্য দেশে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলেও আমাদের ২৫ শতাংশ হারে দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি শুল্ক বাবদ অতিরিক্ত ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ভোক্তাদের দিতে হয়েছে। যদি এটি সমন্বয় হতো, তাহলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও অনেক কমে যেত। দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তেল ও গ্যাসের দাম না বাড়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।

বার্ষিক প্রতিবেদনে ক্যাব ১০ দফা সুপারিশও তুলে ধরেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় রাখতে ধান-চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল সংগ্রহ করা, শস্য বিমার প্রবর্তন করার কথা বলেছে ক্যাব।

এ ছাড়া ডাক্তারদের ফিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ, ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ; বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুলভে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হ‌ুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।