সূচক কমলেও ইতিবাচক পুঁজিবাজার

শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

দিনভর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকলেও সূচক কমার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজারের আজকের লেনদেন। আজ সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৩৬ পয়েন্ট। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্ট।

ডিএসই সূত্র অনুযায়ী, আজ লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার, যা গত প্রায় ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে আজ দর বেড়েছে ১২২টির, কমেছে ২০২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২১টির দর।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বেশ কয়েক দিন ধরে একটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭৫ পয়েন্ট। এ অবস্থায় কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে আজ।

আজ ডিএসইএক্স সূচকটির বার্ষিক সমন্বয় করা হয়েছে। ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এই সূচকে নতুনভাবে ১৫টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে ১৭টি কোম্পানিকে। ২০ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে।

সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকে ট্রিমস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, প্রগতি ইনস্যুরেন্স, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, আমান কটন, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, এমএল ডাইং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স। আর বাদ পড়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, আরামিট সিমেন্ট, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ডাইং, ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইমাম বাটন, মেঘনা পেট, মিথুন নিটিং, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স, শ্যামপুর সুগার মিলস, তাকাফুল ইসলামি ইনস্যুরেন্স, তাল্লু স্পিনিং মিলস ও জিল বাংলা সুগার মিলস। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচকও সমন্বয় করা হয়েছে।

গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ডিএসইএক্স ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে যায় দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল সূচকটি ৫ হাজার ৮৭৯ পয়েন্টের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল, যা গত প্রায় নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সিএসইতে সার্বিক সূচক বাড়ে ১৮৬ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ। গতকাল মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯৭৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বেশ কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজারে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন শঙ্কা ছিল। নির্বাচনের পর কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে—এমন আশাতেই সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। তাই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। বাজারে লেনদেনেও গতি ফিরেছে। বাজারে কিছুটা গতি ফিরে আসায় প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু নতুন বিনিয়োগ আসছে বাজারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, একটানা উত্থানের পর আজ কিছুটা মূল্য সংশোধন হতে দেখা গেছে। এটা বাজারের ইতিবাচক প্রবণতা। তিনি বলেন, ‘আসলে গত বছরও রাজনৈতিক একটা উত্তেজনা ছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল নির্বাচনের পর কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন হচ্ছে। বছরের পর বছর অনেক কোম্পানির শেয়ার কমেছে। যেমন ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দর অনেক কমেছিল। তারা এখন ডিভিডেন্ড দেবে। একটি ইতিবাচক প্রবণতা এসেছে। একে “ক্রান্তিকালীন মধুচন্দ্রিমা” যেতে পারে। তবে মধুচন্দ্রিমাও একসময় শেষ হয়।’

বাজারের এ উত্থানে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামেরও অস্বাভাবিক উত্থান ঘটছে। এতে কোনো ধরনের কারসাজি আছে কি না, তা জানতে চাইলে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আসলে আইটেমভিত্তিক কারসাজি বাজারে হয়েই থাকে। তবে এখন এ ধরনের কোনো কারণ আছে বলে মনে করছি না।’