ঢাকা-চট্টগ্রামে জমি থাকলে ঋণ

>

• নিজের নামে নিষ্কণ্টক জমি থাকলেই বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ
• ঢাকা ও চট্টগ্রামে জমি থাকলে সরল সুদে ঋণ পাওয়া যাবে
• জমির মালিকদের জন্য টাকা নিয়ে বসে আছে বিএইচবিএফসি
• সংস্থাটি ঋণপণ্যটির নাম দিয়েছে ‘নগরবন্ধু’

নিজের নামে নিষ্কণ্টক জমি থাকলেই মিলবে বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ। তবে সবার জন্য বা সারা দেশের জন্য এ ঋণ নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় যাঁদের জমি আছে, সরল সুদে ঋণ পাবেন শুধু তাঁরাই। দুই নগরীর জমির মালিকদের জন্য টাকা নিয়ে বসে আছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। সংস্থাটি ঋণপণ্যটির নাম দিয়েছে ‘নগরবন্ধু’।

নিজের জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য একা কেউ ঋণ নিতে চাইলে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পাবেন। কয়েকজন মিলে দল বা গ্রুপ করে বাড়ি করতে চাইলে প্রত্যেককে দেওয়া হবে ৬০ লাখ টাকা করে। যেমন ৫ কাঠা জমির মালিকানা যদি হয় পাঁচজনের নামে, বাড়ি তৈরির জন্য প্রত্যেককে ৬০ লাখ টাকা করে অর্থাৎ মোট ৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ঋণের সরল সুদের হার ৯ শতাংশ। চক্রবৃদ্ধি অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ আরোপ করা হবে না।

বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, নগরবন্ধু চালু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। মাত্র দেড় বছর। এরই মধ্যে এ ঋণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিএইচবিএফসির যেসব ঋণপণ্য রয়েছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ যায় নগরবন্ধুর মাধ্যমে।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, নগরবন্ধুর ঋণের মেয়াদ ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর। বিএইচবিএফসির সঙ্গে ঋণগ্রহীতা বা গ্রহীতাদের আলোচনা সাপেক্ষে মেয়াদের বিষয়টি ঠিক হবে। তবে পুরো ঋণের টাকায় বাড়ি তৈরি করা যাবে না। বাড়ি তৈরির জন্য মোট যত টাকা বিনিয়োগ হবে, তার ২০ শতাংশ থাকতে হবে ঋণগ্রহীতার।

ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু শর্ত বিবেচনা করবে বিএইচবিএফসি। যেমন ঋণের আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬৫ বছর। একক ঋণের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা ঋণ পাবেন না। তবে ছেলে, মেয়ে, আত্মীয়স্বজন রয়েছেন—এমন গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাও ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।

আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট পাতায় বেতন সনদ এবং ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স ও আয়ের হলফনামা দাখিল করতে হবে। আবেদনকারী বিদেশে থাকলে বিদেশে যে কোম্পানিতে তিনি চাকরি করেন, সে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সনদ আনতে হবে। সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।

নিজস্ব আয় না থাকলেও ঋণের আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে আবেদনকারীর উপার্জনশীল পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে জামিনদার হতে হবে। ঋণ অনুমোদন হওয়ার পর প্রস্তাবিত বন্ধকি জমির পরিচয়সহ নামফলক লাগাতে হবে নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে।

দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী আরও বলেন, ভবিষ্যতে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে ঢাকার উপকণ্ঠের পূর্বাচল। রাজউক ইতিমধ্যে পূর্বাচলে বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদন দিতে শুরু করেছে। পূর্বাচলে যাঁদের বাড়ি করার উপযোগী জমি আছে, ‘নগরবন্ধু’ ঋণের জন্য তাঁরা এখনই আবেদন করতে পারবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো বিএইচবিএফসিরও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) রয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নগরবন্ধু ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ কোটি টাকা।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা নগরবন্ধু ঋণ দেওয়া হয়েছে, বার্ষিক হিসাবে যে অর্জন ৯২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর ছয় মাসে ঋণ পেয়েছেন ১৬৮ জন। আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০৮ জন গ্রহীতা নগরবন্ধু ঋণ পেয়েছেন ১১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বেশির ভাগেরই ঋণের মেয়াদ ২০ বছর।

নগরবন্ধুর গ্রাহক ঢাকার  মো. রোকন উদ্দিন। পেশায় ব্যাংকার। ঢাকার উত্তরার আজমপুরে নিজের জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য বিএইচবিএফসি থেকে তিনি ঋণ নেন ৯৮ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে রোকন উদ্দিন বলেন, ২০ বছর মেয়াদে ৯ শতাংশ সুদে তিনি ঋণ নিয়েছেন। জমির মালিকানার সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করায় সংস্থাটি খুব সহজেই ঋণ দিয়েছে।