বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগে আদানি-উইলমার

>
  • ভারত ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি
  • বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১০০ একর জমি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি
  • প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা
  • বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বড় ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে ভারতের আদানি ও সিঙ্গাপুরের উইলমারের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল)। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ১০০ একর জমি ইজারা নিচ্ছে, যাতে ভোজ্যতেল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করবে তারা। প্রাথমিকভাবে তাদের বিনিয়োগের পরিকল্পনা মোট ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিঙ্গাপুর সফরকালে আদানি-উইলমারের এ বিনিয়োগ প্রস্তাব আসে। তখন উইলমার বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমি চায়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের আশ্বাস দেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে জমি বরাদ্দের বিষয়ে আজ সোমবার একটি চুক্তি সই হবে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, আদানি-উইলমার শুরুতে ৫০ একর জমি চেয়েছিল। পরে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের উন্নয়ন পরিকল্পনা দেখে তারা ১০০ একর জমি চায়। সরকার জমি ইজারা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, আদানি-উইলমারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

আদানি ভারতের বন্দর পরিচালনাকারী শীর্ষ কোম্পানি। ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে তাদের ব্যবসা আছে। অন্যদিকে উইলমার সিঙ্গাপুরের বড় কোম্পানিগুলোর একটি, যাদের মূল ব্যবসা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে। ১৯৯৯ সালে এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী মিলে আদানি-উইলমার লিমিটেড (এডব্লিউএল) নামের একটি কোম্পানি গঠন করে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে কোম্পানিটির ৪৫০টি কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে তাদের বিস্তৃত সরবরাহব্যবস্থা আছে। ভোজ্যতেল ব্যবসায় তারা এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের প্রস্তাবিত কোম্পানির নাম আদানি–উইলমার বাংলাদেশ লিমিটেড। জমি বরাদ্দ নেওয়ার জন্য দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা তিন বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ইজারা নেওয়া জমিতে তারা কারখানা, প্রশাসনিক ভবন, বর্জ্য পরিশোধনাগার, থাকার জায়গা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ তারা রপ্তানি করবে। বড় অংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল জমি নিচ্ছে বার্ষিক ইজারামূল্যের ভিত্তিতে। তারা অনুন্নত জমি নেবে, যা ভরাট করে উন্নত করবে নিজেরাই। তাদের কারখানায় কাজ পাবেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ।

বাংলাদেশ এডিবল অয়েল এ দেশের ক্রেতাদের কাছে সুপরিচিত তাদের ভোজ্যতেল ব্র্যান্ড রূপচাঁদার মাধ্যমে। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের মীজান, কিংস, ফরচুন, ভিওলা ও লাকি ব্র্যান্ডের পণ্য রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর। এটি চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ইতিমধ্যে ১ হাজার ২৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব মিলেছে, যার বিপরীতে জমি বরাদ্দের আগ্রহপত্র বিতরণ করা হয়েছে। মোট ৫৫টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৩ হাজার ৮২৭ একর জমি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।

সরকারি সংস্থার মধ্যে মিরসরাইয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) প্রায় ১ হাজার ৫৫ একর জমি দিয়েছে বেজা। ভারতও সেখানে ১ হাজার একর জমি নিচ্ছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য সেখানে ৫০০ একর জমি দিয়েছে বেজা। চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা জমি পেতে আবেদন করেছেন।

মিরসরাইয়ে এখন ভূমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি দেবে সরকার। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আলাদা একটি বন্দর থাকবে, যেটি দিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরণি নামে চার লেনের একটি সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে।